- অর্থনীতি
- শুধু ছাড় দিয়ে বড় কোম্পানি শেয়ারবাজারে আনা যাবে না
সেমিনারে বক্তারা
শুধু ছাড় দিয়ে বড় কোম্পানি শেয়ারবাজারে আনা যাবে না

শুধু কর ছাড় বা অন্য কোনো সুবিধা দিয়ে দেশের বড় ও ভালো কোম্পানিকে শেয়ারবাজারমুখী করা যাবে না। যতদিন আর্থিক প্রতিবেদনে জাল-জালিয়াতি করার সুযোগ থাকবে এবং ব্যাংক থেকে যে কোনো মেয়াদে যে কোনো অঙ্কের ঋণ সহজে মিলবে, ততদিন ভালো কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসতে চাইবে না। এজন্য অডিটের মান বাড়াতে হবে। কিছু ক্ষেত্রে আইনি বাধ্যবাধকতাও আরোপ করা যেতে পারে। যে কোনো মেয়াদে যে কোনো আকারের ব্যাংক ঋণ পাওয়ার যে সহজ ব্যবস্থা এখন আছে, তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
গতকাল রোববার অনলাইন নিউজ পোর্টাল বিজনেস আওয়ার আয়োজিত 'শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানির তালিকাভুক্তির প্রতিবন্ধকতা ও সমাধান' শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা। রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বর্তমান ও সাবেক চেয়ারম্যানসহ খাত সংশ্নিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশে নিবন্ধিত কোম্পানি লাখের বেশি হলেও গুটিকয় কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত। এর কারণ প্রসঙ্গে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, কোম্পানি বড় হলে, ভালো ব্যবসা করলে বড় ব্যাংকগুলো অর্থায়ন করতে তার পেছনে পেছনে ছোটে। যখন টাকা দরকার হয়, তখনই যদি সহজেই ব্যাংক ঋণ পাওয়া যায়, তাহলে একজন উদ্যোক্তা কেন অন্যের সঙ্গে তার কোম্পানির মালিকানা শেয়ার করবেন। যতদিন ব্যাংকের কাছে বড় এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত অর্থ থাকবে, ব্যবসায়ীরা সহজে ঋণ পাবেন, ততদিন বড় কোম্পানিকে শেয়ারবাজারমুখী করা যাবে না।
বিএসইসির সাবেক এ চেয়ারম্যান আরও বলেন, অনেকে মনে করেন কর হার কমালেই বুঝি কোম্পানি শেয়ারবাজারে চলে আসবে। বহু বছর অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির সঙ্গে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হারের ব্যবধান ১০ শতাংশ ছিল। ওই সুবিধা নিতে কেউ আসেনি। কারণ অডিট রিপোর্টে জাল-জালিয়াতি করে আরও বেশি সুবিধা নেওয়া যায়। কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারমুখী করতে হলে আগে করপোরেট সুশাসন ও অডিটের মান বাড়িয়ে কর ফাঁকির পথ বন্ধ করতে হবে। শেয়ারবাজার থেকে তাৎক্ষণিক অর্থায়নের সুযোগ নেই। কিন্তু নানা প্রক্রিয়া শেষ করে টাকা তুলতে বছর বা তারও বেশি সময় লেগে যায়। এ সময় কী করে কমানো যায়, সে বিষয়ে ভাবতে হবে।
বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম জানান, সব নথি সঠিক থাকলে দু-তিন সপ্তাহে আইপিও অনুমোদন সম্ভব। তিনি বলেন, 'জোর করে নয়, ভালো পরিবেশ দিয়ে এবং উদ্যোক্তাদের মানসিকতার পরিবর্তন করে তাদের শেয়ারবাজারমুখী করতে চাই। দেশের তিনটি বড় ব্যবসায়িক গ্রুপ আগামী বছরের মধ্যে শেয়ারবাজারে আসতে যাচ্ছে।'
শিবলী রুবাইয়াত বলেন, কোম্পানির মালিকানা শেয়ার করে মালিকের আর্থিক ক্ষতি হয় না। বরং কর ছাড়সহ অন্য অনেক কারণে তার মুনাফা আরও বাড়ে। কোম্পানিতে 'করপোরেট কালচার' তৈরি হলে এর স্থায়িত্বও বাড়ে। আগে আইপিও ও প্লেসমেন্ট শেয়ার বাণিজ্য অনেক হয়েছে। এটি বন্ধে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের ঠকিয়ে কেউ টাকা নিয়ে চলে যাওয়ার দিন শেষ।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) সভাপতি মামুনুর রশিদ বলেন, ভালো কোনো কোম্পানি স্বেচ্ছায় শেয়ারবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহে আসছে না। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর এক-তৃতীয়াংশই ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা বীমা কোম্পানি। আইনি বাধ্যবাধকতা আছে বলেই এসব কোম্পানি তালিকাভুক্ত হচ্ছে।
অনুষ্ঠানের সভাপতি বিজনেস আওয়ারের উপদেষ্টা আকতার হোসেন সান্নামাত বলেন, শেয়ারবাজার ইস্যুতে কথা উঠলে সবাই বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের কথাই বলেন। কোম্পানিগুলোর স্বার্থের কথা কম বলা হয়। বছরে ৩০-৪০ হাজার কোটি টাকার টার্নওভার রয়েছে- এমন বড় ও ভালো কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারমুখী হতে চায় না। তারা ব্যাংক ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছে। গত ২০ বছর এ নিয়ে কথা হচ্ছে, কিন্তু সমাধান নিয়ে কেউ ভাবছে না।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, নিজের মেধা ও শ্রম দিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বড় করার পর কোনো উদ্যোক্তা তার কোম্পানির মালিকানা অন্যের সঙ্গে শেয়ার করবেন, যদি তিনি বিশেষ কোনো সুবিধা না পান। তিনি বলেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট কর হার ১৫ শতাংশ এবং ভ্যাট ১০ শতাংশে নামাতে হবে।
মন্তব্য করুন