যশোরে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) জন্য জমি অধিগ্রহণের শুরুতেই জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। অধিগ্রহণের তালিকায় থাকা জমির ন্যায্যমূল্য দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন মালিকরা। মৌজার পার্থক্যে একই স্থানের জমিতে শতকপ্রতি ১৪ হাজার

টাকা পর্যন্ত ব্যবধান তৈরি হয়েছে। আর ছয় বছর আগে সরকার নির্ধারিত মূল্যে হিসাব করায় দামও ধরা হয়েছে দুই-তিন গুণ কম। এসব অভিযোগে জমির মালিকরা গতকাল রোববার যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খানের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। তারা বলছেন, তারা ইপিজেড চান, তবে অধিগ্রহণ করা জমির ন্যায্যমূল্য যেন নিশ্চিত করা হয়।

জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, জমির মালিকদের দাবিগুলো যতটুকু যৌক্তিক বা আইনের মধ্যে পড়ে ততটুকু করবেন। আইনের বাইরে জমির দাম নির্ধারণ করার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, এই এলাকায় ইপিজেড হলে লাখো মানুষ কাজ পাবেন। এলাকার অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। এজন্য স্থানীয়দের সহযোগিতা দরকার। দাপ্তরিক কাজ এগিয়ে চলেছে। এখন যৌথ তদন্ত চলছে। এর আগে গত বছরের ১৯ অক্টোবর ইপিজেডের প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল কবির অভয়নগরের ৫০২ একর ৬১ শতক জমি অধিগ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি দেন। যশোর জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে গত ৩১ জানুয়ারি অধিগ্রহণ বিষয়ে জমির মালিকদের চিঠি দেওয়া হয়।

জমির মালিকদের স্মারকলিপিতে বলা হয়, যশোরে প্রস্তাবিত ইপিজেডের অধিগ্রহণ করা জমিগুলো রয়েছে বিল ধলিয়ার মধ্যে। এ বিলে আটটি মৌজা রয়েছে। এর মধ্যে বালিয়াডাঙ্গা মৌজার ১১২ একর ৭৭ শতক, আরাজি বাহিরঘাট মৌজায় ৯৯ একর ৪৬ শতক, পোমভাগ মৌজায় ১৭১ একর ৮৮ শতক, রাজাপুর মৌজায় ৯০ একর ৭৫ শতক, চেঙ্গুটিয়া মৌজায় ২৫ একর ২৪ শতক, মাগুরা মৌজায় ৯৩ শতক, মহাখাল মৌজায় ১ একর ৪৫ শতক ও আমডাঙ্গা মৌজায় ১৫ শতক জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। এখানে পোমভাগ মৌজায় সরকার নির্ধারিত শতকপ্রতি গড় দাম ২২ হাজার ৮৯১ টাকা। আর অন্য মৌজায় সর্বনিম্ন ৮ হাজার ৭১৬ এবং সর্বোচ্চ ১৩ হাজার ৩৪৬ টাকা ধরা হয়েছে। একই বিলের জমি হলেও মৌজা আলাদা হওয়ায় দামে ব্যবধান তৈরি হয়েছে সর্বোচ্চ ১৪ হাজার টাকা পর্যন্ত।

এ ছাড়া এ দাম সরকার নির্ধারণ করেছে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে। ছয় বছরে এসব জমির বাজারমূল্য তিন-চার গুণ বেড়েছে। তবে প্রস্তাবিত দাম আগের হিসাবেই ধরা হয়েছে। এতে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।

বালিয়াডাঙ্গা মৌজার জমির মালিক সফি কামাল বলেন, ইপিজেডের জন্য অধিগ্রহণ করা বালিয়াডাঙ্গা মৌজার জমির আংশিক পড়েছে নওয়াপাড়া পৌরসভার মধ্যে। এখানে সরকার শতক হিসেবে গড় দাম ধরেছে ৮ হাজার ৭১৬ টাকা। সরকার নির্ধারিত ওই রেটেই অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। অথচ এখানে জমির বাজারমূল্য সরকার নির্ধারিত দামের তিন গুণ।

একই কথা বলেছেন রাজাপুর মৌজার জমির মালিক সমীর ঘোষ ও চেঙ্গুটিয়া মৌজার জমির মালিক শেখর বর্মণ। তারা বলেন, সরকার ছয় বছর আগে জমির যে দাম নির্ধারণ করেছে, সেটা এই সময় কল্পনাও করা যাবে না।

আরাজি বাহিরঘাট মৌজার জমির মালিক ইব্রাহিম বিশ্বাস ও কমল সাহা জানান, ইপিজেড স্থাপন করা হলে জেলার অর্থনৈতিক উন্নতি হবে। কিন্তু প্রস্তাবিত দামে জমি অধিগ্রহণ করা হলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তারা ইপিজেডের বিরোধিতা করছেন না। শুধু ন্যায্য ক্ষতিপূরণ চাচ্ছেন। আরেক জমির মালিক রেজওয়ার মুন্সি জানান, এই আটটি মৌজার অবস্থান যশোর-খুলনা মহাসড়কের খুব কাছে। মোটামুটি আধা কিলোমিটারের মধ্যে।

এই বিলে কেউ মাছ চাষ, আবার কেউ ধান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। জমির ন্যায্যমূল্য না পেলে তারা আর জমি কিনতে পারবেন না। কর্মসংস্থানের পথও বন্ধ হয়ে যাবে।