- অর্থনীতি
- ‘বারবার সুবিধা একটি শ্রেণিকে ইচ্ছাকৃত খেলাপি বানিয়েছে’
‘বারবার সুবিধা একটি শ্রেণিকে ইচ্ছাকৃত খেলাপি বানিয়েছে’

খেলাপি ঋণের সংজ্ঞায় সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন শিথিলতা আনা হয়েছে। খেলাপি ঋণের মতো ক্যান্সার জাতীয় সমস্যার সমাধানে এটা টেকসই কোনো বিকল্প না। বরং বারবার এ ধরনের সুবিধা গ্রাহকদের একটি শ্রেণিকে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি বানিয়েছে।
সোমবার ‘ব্যাংকিংয়ে নৈতিকতা’ শীর্ষক ২০তম নুরুল মতিন স্মারক বক্তৃতায় পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান ড. সাদিক আহমেদ এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক বা অন্য কোনো চাপে শিথিলতা আনা ঠিক হবে না। ব্যাংকিং খাতের দীর্ঘ মেয়াদি স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার আলোকে নীতিমালা প্রণয়ন ও তদারক করতে হবে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও বিআইবিএম গভর্নিং বোর্ডের চেয়ারম্যান ফজলে কবির।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. মো. আখতারুজ্জামান। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক এবং পরিচালক (গবেষণা, উন্নয়ন এবং পরামর্শ) ড. আশরাফ আল মামুন। ১৯৯৮ সাল থেকে ব্যাংকিংয়ে নৈতিকতা শীর্ষক এ বক্তৃতার আয়োজন করা হয়।
মূল প্রবন্ধে ড. সাদিক আহমেদ বলেন, ব্যাংকিং নৈতিকতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ব্যাংকিং সুশাসন। ১৯৯৮ সালে ব্যাংকিং সংস্কার কর্মসূচির আগে এ খাত খুব দুর্বল ছিল। ১৯৯৭ সালের শেষের দিকেও অত্যন্ত দুর্নীতিগ্রস্ত এবং অদক্ষ সরকারি ব্যাংকগুলির আধিপত্য ছিল। মোট আমানতের ৬৭ শতাংশ এবং মোট ঋণের ৬৩ শতাংশ ছিলো তাদের নিয়ন্ত্রণে। দুর্বল শৃঙ্খলা ও অদক্ষ ব্যবস্থাপনার কারণে এসব ব্যাংকের অনেক ঋণই খেলাপি হয়েছে।
তবে ১৯৯৮ সাল পরবর্তী সময়ে ব্যাংকিং খাতের সংস্কারগুলি মূলত ব্যাংকিং খাতের সুশাসন ও নৈতিকতার অনেকাংশ পুনরুদ্ধার করেছিল। এ সময়ে ব্যাংকিং খাত বিশেষ করে সরকারি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণমুক্তকরণ, সরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় সংস্কার এবং বিচক্ষণ নীতিমালা ফলে সামগ্রিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে।
গভর্নর ফজলে কবির বলেন, করোনার দোহাই দিয়ে অনেক ব্যাংক কর্মী ছাটাই করেছে। দ্রুততম সময়ে তাদেরকে চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে।
তিনি বলেন, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা স্বাধীন এবং নিরপেক্ষতার সঙ্গে ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নেয়া এবং বাস্তবায়ন করতে পারলে তা আদর্শ হিসেবে বিবচনা করা হয়।
ব্যাংকিং খাতের যেসব আদর্শ আন্তর্জাতিক চর্চা হয় তার আলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদ এবং ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্নিষ্টদের দায়িত্ব কর্তব্য আলাদা করে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ব্যাংকিং খাতের উন্নতির নীতি নির্ধারণী বিষয়ে এএফএম নুরুল মতিনের অবদান ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২ এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ন্যাশনালাইজেশন অর্ডার ১৯৭২ প্রনয়ণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তার জন্ম ১৯২৮ সালে। তিনি ১৯৫১ সালে তদানিন্তন স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের গবেষণা বিভাগে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন।
দীর্ঘ ব্যাংকিং জীবনে তিনি স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের নির্বাহী পরিচালক, ইক্যুইটি পার্টিসিপেশন ফান্ডে নির্বাহী পরিচালকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তৎকালীন বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারম্যান এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর হন। তিনি বিআইবিএমের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ও পরিচালক ছিলেন। ১৯৭৮ সালে তিনি মারা যান।
মন্তব্য করুন