- অর্থনীতি
- ভোজ্যতেলে ভ্যাট প্রত্যাহারের সুবিধা সাধারণ মানুষ পাবেন তো?
ভোজ্যতেলে ভ্যাট প্রত্যাহারের সুবিধা সাধারণ মানুষ পাবেন তো?
প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি

বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে সয়াবিন ও পাম তেলের উৎপাদন ও ভোক্তা পর্যায়ের মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। উৎপাদন পর্যায়ে থাকা ১৫ শতাংশ এবং ভোক্তা পর্যায়ে থাকা ৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করা হবে। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে। গতকাল অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সরকারের এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।
সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ভোজ্যতেল ও চিনি থেকে ভ্যাট তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, ইউক্রেনে যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে পরিবহন খরচ বেড়েছে। আবার আমদানিকারকরা পরিস্থিতির সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছেন। যারা সিন্ডিকেট করে মুনাফা নেওয়ার চেষ্টা করে, তারা এবার সুযোগ পাবে না।
সংশ্নিষ্টরা জানিয়েছেন, ভ্যাট প্রত্যাহারের মাধ্যমে সরকার ভোজ্যতেলের দামের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা আটকাতে চাইছে। তবে এখনকার তুলনায় দাম কমার সম্ভাবনা কম। এদিকে ভ্যাট প্রত্যাহারের বিষয়ে এনবিআর এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করেনি। এনবিআরের সদস্য (কাস্টমস নীতি) মো. মাসুদ সাদিকের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। বর্তমানে ভোজ্যতেলের আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ, উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ এবং ভোক্তা অর্থাৎ খুচরা বিক্রি পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে।
ভোজ্যতেলের আগে গত সপ্তাহে অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক্ক ১০ শতাংশ কমিয়েছে সরকার। জনসাধারণ যাতে কম মূল্যে তেল ও চিনি কিনতে পারে সেজন্য সরকার রাজস্ব ছাড় দিচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু ছাড় দিলেই হবে না, ছাড়ের সুবিধা যাতে ভোক্তারা পান সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। মনিটরিং কঠোর করতে হবে।
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান সমকালকে বলেন, সরকার যে পরিমাণ ভ্যাট ও শুল্ক্ক কমিয়েছে, সেই হারে পণ্যের মূল্য কমাতে হবে। কমানো হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। যেন ভ্যাট কমানোর সুফল ভোক্তারা পান তার জন্য নিবিড় তদারকির প্রয়োজন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মইনুল ইসলাম সমকালকে বলেন, শুধু শুল্ক্ক ছাড় দিয়ে জনগণের কম দামে পণ্য পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে না। কারণ বাজারে সিন্ডিকেট রয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ে নানা ধরনের কারসাজি হয়। এসব সিন্ডিকেট, কৃত্রিম সংকটের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে ভোজ্যতেলের দাম কয়েক দফা বেড়েছে। সর্বশেষ গত ৭ ফেব্রুয়ারি সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৭ টাকা বাড়িয়ে বোতলজাত সয়াবিনের এক লিটার বোতলের ১৬৮ টাকা, ৫ লিটারের বোতলের দাম ৭৯৫ টাকা এবং খোলা সয়াবিন প্রতি লিটার ১৪৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর পাম তেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে ১৩৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে বোতলজাত সয়াবিন তেল নির্ধারিত দরে বিক্রি হলেও খোলা সয়াবিন ও পাম তেল বিক্রি হচ্ছে বেশি দরে। আর খোলা সয়াবিন পাওয়া যাচ্ছে না। তবে সব ধরনের তেলের সরবরাহ কম। এর মধ্যে পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলো গত ২৭ ফেব্রুয়ারি লিটারে আরও ১২ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান সমকালকে বলেন, ভোজ্যতেলের বাজারে অস্থিরতা দূর এবং মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ভ্যাট কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে জনসাধারণ কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবেন।
ভোজ্যতেলের বড় পরিশোধনকারী কোম্পানি সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা সমকালকে বলেন, উৎপাদন ও ভোক্তা পর্যায়ে ভ্যাট প্রত্যাহার করা হলে ভোক্তারা বিশেষ সুবিধা পাবেন না। কারণ এই দুই পর্যায়ে যে ভ্যাট হয়, তা খুব বেশি নয়।
ট্যারিফ কমিশনের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভোজ্যতেলে আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট পরিশোধ হয় সবচেয়ে বেশি। এরপর উৎপাদন ও ভোক্তা পর্যায়ে আমদানি পর্যায়ের পরিশোধ করা ভ্যাট সমন্বয় করে বাকিটা দেওয়া হয়। উৎপাদন ও ভোক্তা পর্যায়ে সবমিলিয়ে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলে ৮ থেকে ৯ টাকা পর্যন্ত ভ্যাট হয়। খোলা সয়াবিন ও ভোজ্যতেলে এ ভ্যাট আরও কম। কারণ খোলা তেলের বিক্রি পর্যায়ে ভ্যাট আদায় হয় না।
এদিকে ভ্যাট কমানোর পাশাপাশি সরকার ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে সরবরাহ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রমজানে সারাদেশে এক কোটি পরিবারকে কম মূল্যে সয়াবিন তেল, চিনি. পেঁয়াজ, ছোলা, খেজুর সরবরাহ করবে সরকার।
প্রতিযোগিতা কমিশনে কমিটি গঠন : বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ভোজ্যতেলের বাজারে দামবৃদ্ধি ও অস্থিরতা প্রতিযোগিতা কমিশনের দৃষ্টিতে এসেছে। এই বাজারে প্রতিযোগিতা আইনবিরোধী কোনো কার্যক্রম হচ্ছে কিনা তা অনুসন্ধানের জন্য তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিশন ভোজ্যতেলের বাজারে প্রতিযোগিতাবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড দেখলে তা তাদের অবহিত করার জন্য জনসাধারণকে অনুরোধ জানিয়েছে। তথ্য দাতার নাম-পরিচয় কমিশন গোপন রাখবে।
মন্তব্য করুন