- অর্থনীতি
- উন্নয়ন যাত্রায় বড় অংশীদার হতে পারে জাপান
উন্নয়ন যাত্রায় বড় অংশীদার হতে পারে জাপান

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন যাত্রায় জাপান হতে পারে বড় অংশীদার। বাংলাদেশ থেকে জাপানে পণ্য রপ্তানির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশিদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে দেশটিতে। আবার সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও জাপান গুরুত্বপূর্ণ দেশ হতে পারে। তবে সে জন্য বিনিয়োগকারীদের চাহিদা অনুযায়ী সেবাসহ প্রয়োজনীয় সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত 'পরবর্তী উন্নয়ন যাত্রার জন্য জাপান-বাংলাদেশ অংশীদারিত্ব' শীর্ষক সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন। জাপানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছরপূর্তি উপলক্ষে রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় সংলাপটি অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বর্তমান সরকার জাপানের সঙ্গে বন্ধুত্ব আরও শক্ত করতে চায়। দেশের সব এলাকায় জাপানের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চিহ্ন রয়েছে। বর্তমানে মাতারবাড়ি, মেট্রোরেল, আড়াইহাজার অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাপান কাজ করছে। এসব প্রকল্প সম্পন্ন হলে সেগুলো দেশের অর্থনীতিতে তা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ভবিষ্যতের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, ব্যবসা-বাণিজ্যে জাপানকে পাশে চায় সরকার। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়ানো হবে। জাপানের সঙ্গেও মুক্তবাণিজ্য চুক্তির উদ্যোগ রয়েছে।
ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন, এলডিসি উত্তরণের পরের সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের বাধাগুলো দূর করতে হবে। জনশক্তির দক্ষতা বাড়াতে হবে। এ বিষয়ে জাপান বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে চায় বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশে জাপানের বিনিয়োগ তিন গুণ হয়েছে। তবে বাংলাদেশের সামনে নতুন কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বাংলাদেশের শিল্প খাতকে বহুমুখীকরণে যেতে হবে। উৎপাদনশীলতা বাড়াতে নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হবে। আগামীতে বাংলাদেশ ব্যবসা সহজ করার কার্যক্রমে মনোযোগ দেবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, জাপানি কোম্পানিগুলোকে কাস্টমসের ছাড়পত্র পেতে অনেক সময় ব্যয় করতে হচ্ছে। আমদানি দায় মেটানোর ক্ষেত্রে টিটি (টেলিগ্রাফিক ট্রান্সফার) পদ্ধতিতে বেশকিছু বিধিনিষেধ আছে। আবার কর-সংক্রান্ত জটিলতাও বেশ। অন্যদিকে স্থানীয় ও বিদেশি শিল্পে প্রণোদনার ক্ষেত্রে বৈষম্য রয়েছে। এসব সমস্যার সমাধান হলে বাংলাদেশ জাপানি বিনিয়োকারীদের বড় গন্তব্য হতে পারে।
সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, বিভিন্ন দেশ ও বৈশ্বিক সংস্থা যখন বাংলাদেশে অর্থায়নের দ্বিধা প্রকাশ করেছে, তখন জাপান বেশকিছু বড় প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে। জাপান বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দাতা দেশও। বর্তমানে বিদ্যুৎ, বন্দর ও রেল খাতে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, সরকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। সে ক্ষেত্রে জাপান অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম।
মূল প্রবন্ধে সিপিডির গবেষণা ফেলো সৈয়দ ইউসুফ সাদাত বলেন, জাপানে বাংলাদেশ থেকে বছরে ৩৫ কোটি ৭০ লাখ ডলার মূল্যের টি-শার্ট ও ভেস্ট অব কটন রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু রপ্তানি হচ্ছে ১২ কোটি ৭০ লাখ ডলারের। অদক্ষতা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, দুর্নীতি ও ব্যবসার বাড়তি খরচে পণ্যটির রপ্তানি সম্ভাবনার ৬৪ শতাংশই কাজে লাগানো যাচ্ছে না। বাংলাদেশ থেকে জাপানে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হওয়া ১০ পণ্যে বার্ষিক আয় ৭৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এসব সমস্যার সমাধান করা গেলে এটি ৭৭ শতাংশ বাড়িয়ে ১২৮ কোটি ডলারে উন্নীত করা সম্ভব।
তিনি বলেন, এলডিসি উত্তরণ-পরবর্তী ঝুঁকি মোকাবিলায় জাপানের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সই, জিএসপি প্লাস সুবিধা আদায়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। প্রবন্ধে বলা হয়, জাপান বাংলাদেশে রপ্তানি সম্ভাবনার ৭১ শতাংশ কাজে লাগাতে পারছে। অন্যদিকে জাপানে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ হার মাত্র ৫৮ শতাংশ।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, জাপানের অর্থায়ন ও বিনিয়োগ বাংলাদেশের শিল্পায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আগামীতে বাংলাদেশকে যে ধরনের শিল্পায়নে যেতে হবে, সে ক্ষেত্রেও জাপান বড় ভূমিকা রাখতে পারে। সে জন্য দেশটির সঙ্গে অংশীদারিত্ব বাড়াতে হবে।
জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত সাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, জাপান ও বাংলাদেশের বন্ধুত্ব অটুট রাখতে সব ধরনের উদ্যোগ রয়েছে।
জাপান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আসিফ এ চৌধুরী বলেন, বিনিয়োগে প্রধান বাধা সরকারি দপ্তরগুলোর নানা সমস্যা। কাস্টমস, নানা ধরনের কর, আয়করসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে জটিলতা রয়েছে। দুর্নীতির মতো সমস্যাও রয়েছে। এসব দূর করা গেলে জাপান হবে বাংলাদেশের বড় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অংশীদার।
মন্তব্য করুন