- অর্থনীতি
- মূল্যস্ফীতি ১৬ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ
মূল্যস্ফীতি ১৬ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ

প্রতীকী ছবি
মূল্যস্ফীতি আবার ৬ শতাংশের ঘর অতিক্রম করেছে। পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে গেল ফেব্রুয়ারি মাসে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ। এ হার গত ১৬ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে মূল্যস্ফীতি এর চেয়ে বেশি ছিল। ওই মাসে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ। গতকাল সোমবার বিবিএস ফেব্রুয়ারির মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশ করেছে। এর আগের মাস জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
নিত্যপণ্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি এ মুহূর্তে অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকি মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা মনে করেন, বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের অতিরিক্ত মূল্যের চাপে আছে নিম্ন আয়ের মানুষ। কারণ, খাদ্যপণ্য কিনতেই তাদের মোট আয়ের একটা বড় অংশ চলে যায়। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ট্রাকে মানুষের দীর্ঘ লাইন পরিস্থিতির বড় প্রমাণ। তাদের ক্ষেত্রে মূল্যস্ম্ফীতির হার সরকারি পরিসংখ্যানের চেয়ে বেশি।
গত রোববার বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির এক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি, তরিতরকারি, মাছ, মাংস, ডিমসহ অধিকাংশ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কয়েক মাস ধরে চড়া। কোনো কোনো পণ্যের দাম ইউরোপ এবং আমেরিকার চেয়েও বেশি। ওই অনুষ্ঠানে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, সরকারি পরিসংখ্যানে মূল্যস্ম্ফীতির বাস্তব পরিস্থিতির সঠিক চিত্র উঠে আসছে না।
বাজেটে চলতি অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৩ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তবে গত নভেম্বরে দেশে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের দরবৃদ্ধি এ লক্ষ্যমাত্রা ধরে রাখাকে অনিশ্চিত করে তোলে। ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার আক্রমণ এ পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলেছে। বিবিএসের হিসাবে, ফেব্রুয়ারিতে গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এ হারও এক বছরের মধ্যে বেশি।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) গবেষণা পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা মনে করেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) মূল্যস্ফীতির যে পরিসংখ্যান দিচ্ছে, প্রকৃত মূল্যস্ফীতি আরও বেশি। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি বিবিএসের তথ্যের চেয়ে আরও অনেক বেশি। কারণ, সানেমের এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিম্ন আয়ের মানুষ তাদের মোট আয়ের ৬০ শতাংশ ব্যয় করে খাদ্যপণ্য সংগ্রহ করছে। এমনকি বিবিএসের তথ্যেও বলা আছে, খাদ্য গ্রহণে মোট আয়ের ৪৭ শতাংশ ব্যয় হয়।
ড. সায়মা হক বলেন, মূল্যস্ফীতির হার নিয়ে বিতর্ক বাদ দিলেও বিবিএসের প্রক্রিয়াগত দুর্বলতা এড়ানো যায় না। নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের নির্ধারিত বাজারের তথ্যের ওপর তারা প্রতিবেদন তৈরি করে। ভিত্তি বছরও অনেক পুরোনো। প্রকৃত চিত্র পেতে পদ্ধতি হালনাগাদ করা প্রয়োজন। আয়ের ভিত্তিতে অন্তত চারটি গ্রুপের জন্য আলাদা হিসাব করা দরকার। তাহলে কোন গ্রুপের জন্য মূল্যস্ফীতির চাপ কতটুকু, তা বোঝা যাবে। এর ভিত্তিতে সরকার বিভিন্ন সহায়তার কথা ভাবতে পারে।
বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট হিসাবে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ২২ শতাংশ। আগের মাসে এ হার ছিল ৫ দশমিক ৬০ শতাংশ। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬২ শতাংশীয় পয়েন্ট। তবে জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। ফেব্রুয়ারি শেষে এ হার ৬ দশমিক ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। আগের মাসে যা ছিল ৬ দশমিক ২৬ শতাংশ।
খাদ্য, পানীয় ও তামাক, কাপড় ও জুতা, স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা, পরিবহন, যোগাযোগসহ ৮ ক্যাটাগরির পণ্য ও সেবার খরচের ভিত্তিতে বিবিএস মূল্যস্ফীতির হিসাব করে থাকে। শহরের ৪২২টি এবং গ্রামের ৩১৮টি পণ্য ও সেবার দাম বিবেচনায় নেয় বিবিএস। বিবিএস দেশের ১৪০টি বাজার থেকে পণ্যমূল্যের তথ্য সংগ্রহ করে থাকে, যার মধ্যে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ১২টি বাজার রয়েছে।
মন্তব্য করুন