সয়াবিনের পর এবার পাম তেলের দাম কমিয়েছে সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে পাম তেলের নতুন দর নির্ধারণ করেছে। এখন থেকে প্রতি লিটার পাম তেল ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হবে। এতদিন এই তেলের প্রতি লিটারের দাম ছিলো ১৩৩ টাকা।

মঙ্গলবার ওই বৈঠকের পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচির(অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান সমকালকে বলেন, ‘কর ছাড়সহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে ভোজ্যতেলের দর পুনরায় নির্ধারণ করা হয়েছে। গত রোববার সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল। আজ পাম তেলের দাম নির্ধারণ করা হল।’

২০ মার্চ ভোজ্যতেলের পরিশোধনকারি কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে সয়াবিনের দাম নির্ধারণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। 

ওইদিন সংবাদ সম্মেলন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জেষ্ঠ সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানান, সয়াবিনের দাম ঠিক হলেও পাম তেলের দাম ঠিক হয়নি। পাম তেলের বিষয়ে আরও কিছু তথ্য ও হিসাব নিকাশের বিষয় রয়েছে। ২২ মার্চ মিল মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে দাম ঠিক করা হবে।

এর আগে গত ৭ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে বোতলজাত প্রতিলিটার সয়াবিন তেলের মূল্য ১৬৮ টাকা এবং পাঁচ লিটারের বোতল ৭৯৫ টাকা নির্ধারণ করেছিল। আর খোলা তেলের মূল্য নির্ধারণ করেছিল প্রতি লিটার ১৪৩ টাকা। ওই সময় পাম তেলের প্রতি লিটারের দাম নির্ধারণ করা হয় ১৩৩ টাকা। এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে ব্যবসায়ীরা গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১২ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে। যদিও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাড়তি দামের প্রস্তাবে সায় দেয়নি। 

তবে ব্যবসায়ীরা বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ কমিয়ে দেয়। খোলা সয়াবিন ও পাম তেল অনেক বাজারে পাওয়া যায়নি। বোতলজাত তেলও অনেক জায়গায় কম পাওয়া গেছে। আবার কোনো কোনো কোম্পানি ভোজ্যতেলের সঙ্গে অন্য পণ্য কেনার শর্ত দিয়ে বেচাকেনা করে। 

এরপর প্রথমে সয়াবিন ও পাম তেলের স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে থাকা ১৫ শতাংশ ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে থাকা ৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করে সরকার। সবশেষে গত ১৫ মার্চ আমদানি পর্যায়ে থাকা ১৫ শতাংশ ভ্যাট কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা এ সুবিধা পাবেন। শুল্ক সুবিধা দেওয়ার পর সরকার পুনরায় দাম নির্ধারণ করলো।

দেশে বছরে প্রায় ২০ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। এরমধ্যে স্থানীয় উৎপাদন থেকে পাওয়া যায় ২ লাখ টন। বাকি ১৮ লাখ টন আমদানি করে চাহিদা মেটানো হয়। প্রধানত সয়াবিন ও পাম তেল আমদানি হয়। আমদানির সিংহভাগই পাম তেল। 

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী দেশের ব্যবসায়ীরা বছরে প্রায় ১১ লাখ টন অপরিশোধিত পাম তেল আমদানি করে। আর অপরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানি হয় ৫ লাখ টন। পাশাপাশি ২৪ লাখ টন সয়াবিন বীজ আমদানি হয়, যা থেকে ৪ লাখ টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল পাওয়া যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিন স্তরে ভ্যাট প্রত্যাহারের কারণে প্রতি লিটারে ২০ থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত খরচ কমবে পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলোর। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের দাম এবং জাহাজ ভাড়া বেড়ে যাওয়ার কারণে ভ্যাট প্রত্যাহারের কারণে যতটা খরচ কমছে তার পুরোটা দাম কমানো সম্ভব হয়নি।