- অর্থনীতি
- এক বছরে মেয়াদোত্তীর্ণ শিল্পঋণ বেড়েছে ২২ শতাংশ
এক বছরে মেয়াদোত্তীর্ণ শিল্পঋণ বেড়েছে ২২ শতাংশ

করোনার প্রভাব মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি-সহায়তার ফলে সময়মতো পুরো ঋণ পরিশোধ না করলেও তা খেলাপি করতে পারেনি ব্যাংক। এ কারণে শিল্প খাতে মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ব্যাপক হারে। গত ডিসেম্বর শেষে মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৫ হাজার ৮২৭ কোটি টাকা। ২০২০ সাল শেষে এর পরিমাণ ছিল ৭০ হাজার ৬০৪ কোটি টাকা। এর মানে এক বছরে মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ বেড়েছে ১৫ হাজার ২২৩ কোটি টাকা বা ২১ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
সংশ্নিষ্টরা জানান, এক সময় চলতি মূলধন, তলবি ও মেয়াদি সব ক্ষেত্রেই নির্ধারিত তারিখে ঋণ পরিশোধ না করলেই তা মেয়াদোত্তীর্ণ হিসেবে বিবেচিত হতো। কোনো একটি ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার ছয় মাস পার হলে ব্যাংক কোম্পানি আইনের আলোকে তা খেলাপি হয়। আইন পরিবর্তনের ক্ষমতা একমাত্র সংসদের। যে কারণে আইনে হাত দেওয়া ছাড়াই মেয়াদি ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার সময়সীমা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৯ সালের জুন থেকে মেয়াদি ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ দেখাতে বাড়তি ছয় মাস সময় পাচ্ছে ব্যাংক। এর মানে ঋণ পরিশোধের নির্ধারিত তারিখ অতিক্রমের ছয় মাস পর মেয়াদোত্তীর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই ছয় মাস পার হওয়ার পর তা খেলাপি হিসেবে বিবেচিত হয়। এর সঙ্গে গত দুই বছর ধরে করোনার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা ছাড় হয়েছে। শিল্পঋণের প্রায় ৫৫ শতাংশ মেয়াদি। যে কারণে মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ বৃদ্ধি উদ্বেগজনক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
জানতে চাইলে ট্রাস্ট ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ব্যাংক খাত বিশ্নেষক ফারুক মঈনউদ্দীন সমকালকে বলেন, করোনার ছাড় বিবেচনায় না নিলে খেলাপি ঋণ আরও অনেক বেশি হতো। কেননা যত সুযোগই দেওয়া হোক, ব্যবসায়ীদের একটি শ্রেণি ঋণ পরিশোধ না করার নানা উপায় খোঁজে। বিভিন্ন অজুহাতে তারা ঋণ পরিশোধ থেকে বিরত থাকে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় সদিচ্ছা। এক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতা, ব্যাংক এবং সরকার সব পক্ষের সদিচ্ছা থাকতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর শেষে শিল্প খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৯ হাজার ২৬২ কোটি টাকা। এ খাতের মোট ছয় লাখ ২৮ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা ঋণ স্থিতির, যা ৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে পাঁচ লাখ ৭২ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা ঋণস্থিতির ৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ খেলাপি ছিল। এর মানে এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে তিন হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা। আর ঋণস্থিতি বেড়েছে ৫৬ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০২১ সালে শিল্প খাতে মোট চার লাখ ২৯ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা বিতরণ হয়েছে। আগের বছর বিতরণের পরিমাণ ছিল তিন লাখ ৬১ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। এই হিসাবে আগের বছরের তুলনায় বিতরণ বেড়েছে ৬৮ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা বা ১৮ দশমিক ৯২ শতাংশ। অবশ্য করোনা শুরুর বছর ২০২০ সালে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শিল্পঋণ বিতরণ ব্যাপক কমে যায়। এর আগে ২০১৯ সালে চার লাখ ২৫ হাজার ৮২ কোটি টাকার শিল্পঋণ বিতরণ হয়। এক বছরের ব্যবধানে ৬৩ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা বা ১৫ শতাংশ কমে যায়। ২০২১ সালে শিল্পঋণ আদায় হয়েছে তিন লাখ ৫১ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা। ২০২০ সালে আদায়ের পরিমাণ ছিল তিন লাখ ১৯ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৯ সালে আদায়ের পরিমাণ ছিল তিন লাখ ৫০ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা।
করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পোদ্যোক্তাদের জন্য তিন বছর মেয়াদি ৬০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার। এর মধ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ৪ শতাংশ সুদে বিতরণ করা হচ্ছে ২০ হাজার কোটি টাকা। আর সাড়ে ৪ শতাংশ সুদে বড় শিল্পে বিতরণ করা হচ্ছে ৪০ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে আরও বেশ কয়েকটি প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকগুলো এক লাখ ২৪ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকার শিল্পঋণ বিতরণ হয়েছে। আগের বছরের শেষ তিন মাসে বিতরণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৫৩৪ কোটি টাকা। শেষ তিন মাস এক লাখ এক হাজার ৯৭২ কোটি টাকার ঋণ আদায় হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৯২ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা।
মন্তব্য করুন