দুর্নীতি দমন কমিশনের জিজ্ঞাসাবাদে অনেক প্রশ্নেরই জবাব দেননি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরী (এস কে সুর) ও সাবেক নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং কোম্পানির অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মঙ্গলবার তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

ঢাকায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদক উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান। এ সময় তারা অনেক প্রশ্নের জবাব না দিয়ে চুপ ছিলেন। আবার কিছু প্রশ্ন এড়িয়ে গেছেন। কিছু প্রশ্নের জবাবে তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন।
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সেগুনবাগিচায় কমিশনের প্রধান কার্যালয় থেকে বের হওয়ার সময় সিতাংশু কুমার সুর ও শাহ আলমের বক্তব্য জানতে চাইলে তারা সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলে যান। এর মধ্যে এস কে সুর বলেন, তার যা বলার দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তাকে বলেছেন।
দুদক সচিব মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক দু'জন কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হওয়ার পর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ওই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা সিতাংশু কুমার সুর ও শাহ আলমের যোগসাজশ রয়েছে বলে জানিয়েছেন। অনুসন্ধানে তাদের দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেলে দুদক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুধু তারা নন; ওই প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাতে আর কারও জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের সাবেক এমডি পলাতক আসামি পি কে হালদার ও অন্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই দুই কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
দুদক সূত্র জানায়, এস কে সুর বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি বিভাগের ডেপুটি গভর্নরের দায়িত্বে ছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেছেন, কে বা কারা শত্রুতাবশত তার বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ দিয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের অর্থ আত্মসাৎ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা নিয়ে কিছু প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তিনি চুপ ছিলেন। এ প্রতিষ্ঠানের অর্থ লোপাট বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যক্রমে অবহেলা, উদাসীনতা বিষয়ে প্রশ্নের জবাব দিতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। এ ছাড়া বলেছেন, তিনি হিন্দু ধর্মাবলম্বী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিহিংসামূলক অভিযোগ দিয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ে অর্থ আত্মসাৎ ঘটনার সময় শাহ আলম বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি বিভাগে মহাপরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি দুদক কর্মকর্তাকে বলেছেন, পি কে হালদারকে তিনি চিনতেন না। অন্যান্য লিজিং কোম্পানির মতো ইন্টারন্যাশনাল লিজিং কোম্পানির কাগজপত্রও তার কাছে গেছে। এ ক্ষেত্রে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং কোম্পানির কাজগুলোকে আলাদা করেননি। নথিপত্রভিত্তিক অনেক প্রশ্নের জবাব দিতে ব্যর্থ হন তিনি। অনেক সময় তিনি চুপ ছিলেন। দুদককে তিনি আরও বলেন, ডেপুটি গভর্নর হিসেবে তার পদোন্নতির একটি বিষয় ছিল। সে কারণে কেউ প্রতিহিংসাবশত তার বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ দিয়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, জালিয়াতি করে ভুয়া কাগজে, অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং কোম্পানি থেকে ঋণের জন্য বহু ফাইল বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এ দুই কর্মকর্তার কাছে গেছে। তারা ওইসব ফাইল যাচাই না করে ঋণের সপক্ষে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। এ দায় তারা এড়াতে পারেন না। দুদকের অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত- তারা আর্থিক খাতের অর্থ লোপাট মামলার আসামি বিদেশে পলাতক পি কে হালদারের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। গতকাল এস কে সুরকে সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। শাহ আলমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় সকাল ১০টা থেকে বেলা সোয়া ২টা পর্যন্ত।
পি কে হালদার রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের সাবেক এমডির দায়িত্বে থাকলেও একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রভাব খাটিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করেন। এ পর্যন্ত ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ও ফাস ফাইন্যান্সের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ৩৪টি মামলা করেছে দুদক। ওইসব মামলার ১২ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০ জন দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।