- অর্থনীতি
- বিনিয়োগকারীদের দুশ্চিন্তা বাড়ছে
বিনিয়োগকারীদের দুশ্চিন্তা বাড়ছে

প্রতীকী ছবি
ধারাবাহিক দরপতনে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের দুশ্চিন্তা বাড়ছে। ক্ষুদ্র বা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী- কারও মধ্যে স্বস্তি নেই। রমজান শেষে আসন্ন ঈদ কী করে কাটবে, এ নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু কিছু করারও নেই। জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহ থেকে দরপতন শুরু হয়েছিল। এখনও থেমে থেমে দরপতন চলছে।
গতকাল মঙ্গলবার প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইতে ৩৭৮ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড কেনাবেচা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৩৭টিই দর হারিয়েছে। দর বেড়েছে মাত্র ১৮টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ২৩টির দর। দর হারানো শেয়ারগুলোর মধ্যে ২৫০টি সার্কিট ব্রেকারের সর্বনিম্ন দরে কেনাবেচা হয়েছে। এর মধ্যে শেষ পর্যন্ত ১৬৫টি ওই দরে স্থির ছিল। প্রায় দেড়শ শেয়ারের কোনো ক্রেতা ছিল না। দুই সপ্তাহে প্রায় দেড়শ কোম্পানির দর ৫ থেকে ১৭ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।
ঢাকার দুটি ব্রোকারেজ হাউসে গিয়ে দেখা যায়, কম্পিউটার স্ট্ক্রিনে দর পড়তে থাকা দরের দিকে শুধু 'ফ্যালফ্যাল' করে তাকিয়ে আছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তাকিয়ে থাকা ছাড়া তাদের কিছু করারও ছিল না। এরই মধ্যে দুপুর ১টার পর হঠাৎ করে গুজব রটে, দরপতন রোধে ফের 'ফ্লোর প্রাইস' আরোপ করতে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এর সত্যতা মেলেনি।
দরপতন রোধে গত ৯ মার্চ সব শেয়ারের দরে নিচের সার্কিট ব্রেকার ২ শতাংশ বেঁধে দিয়েছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান, দরপতন কমাতে এ ব্যবস্থাই এখন দরপতনের বড় কারণ। প্রতিদিনই শতাধিক শেয়ার ক্রেতাশূন্য থাকছে।
জানতে চাইলে ডিএসইর ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএর সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও বলেন, সার্কিট ব্রেকারের নিম্নসীমা ২ শতাংশ বেঁধে দেওয়াই চলতি দরপতনের বড় কারণ। কৃত্রিম ব্যবস্থা দিয়ে যে দরপতন আটকানো যায় না, তা প্রমাণিত। কিন্তু তারপরও এ ব্যবস্থা বহাল আছে। এভাবে কয়দিন চলবে, তাও বুঝতে পারছেন না তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শীর্ষ এক ব্রোকারেজ হাউসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সমকালকে বলেন, দরপতন রুখতে এখন উচিত পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত সার্কিট ব্রেকার একেবারে তুলে দেওয়া। হয়তো প্রথম এক-দু'দিন বড় দরপতন হবে। তারপর বাজার দ্রুতই পরিস্থিতি নিজের শক্তিতে চলতে শুরু করবে। তিনি উল্লেখ করেন, লভ্যাংশ ঘোষণার পর গতকাল লংকাবাংলার শেয়ার সার্কিট ব্রেকারের আওতায় ছিল না। তার পরও এক টাকা কমে ৩০ টাকা ৫০ পয়সা দরে কেনাবেচা হয়েছে। যদিও ১০ টাকা দরেও শেয়ারটি কেনাবেচার সুযোগ ছিল। তার মতে, যখন বড় দরপতন হয়, তার পরপরই দ্রুত ক্রেতা জুটে যায়। দরপতনে যারা ধৈর্য হারিয়ে বা ভয়ে শেয়ার বিক্রি করেন, তারাই লোকসান করেন।
অপর এক ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তা বলেন, কৃত্রিমভাবে শেয়ারবাজারে ধরে রাখার চেষ্টা আরও খারাপ। গত সপ্তাহেও নানাভাবে শেয়ারদর বাড়ানোর চেষ্টা করেছিল বিএসইসি। এমন চেষ্টায় এক বা দু'দিন ফল মেলে, প্রতিদিন নয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থার কথায় কিছু ব্রোকার ডিলার ও মার্চেন্ট ব্যাংক শেয়ার কিনেছিল। এখন তারা লোকসানে। ফলে নতুন করে বিনিয়োগ আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন অনেকে। তাছাড়া কারসাজি হচ্ছে দেখেও তা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। নিয়ন্ত্রক সংস্থার এ বিষয়ে বোধোদয় না হলে পরিস্থিতি কখনোই বদলাবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মন্তব্য করুন