আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছর হবে অত্যন্ত নাজুক। বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক পরিস্থিতির কারণেই অর্থবছরটিতে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ থাকবে। ফলে এ রকম অসাধারণ সময়ে সাধারণ বাজেট দিলে হবে না। সরকারকে ব্যতিক্রম বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। এ জন্য সংসদে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার আগে বাজেটের নীতি কাঠামোর খসড়া প্রকাশ করা দরকার। যাতে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তাদের সমস্যা, প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ী মতামত তুলে ধরতে পারেন। পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে মূল লক্ষ্য ধরে আগামী বাজেট প্রণয়ন করা উচিত।

রোববার এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক পল্গ্যাটফর্ম আয়োজিত 'আসন্ন বাজেট নিয়ে জনমানুষের প্রত্যাশা' শীর্ষক আলোচনা সভার সমাপনী বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন খাত ও জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা বাজেট নিয়ে তাদের প্রত্যাশা তুলে ধরেন। সবার মতামতের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সিপিডির সংলাপ বিভাগের যুগ্ম পরিচালক অভ্র ভট্টাচার্য।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বিশ্ব বাজারে পণ্যমূল্য বেড়েছে। বেড়েছে সার ও জ্বালানির মূল্য। দেশে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। এতে নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষ বিপর্যস্ত সময় পার করছে। আর্থিক ও খাদ্য সহায়তা দিয়ে তাদের সহায়তা করতে হবে। টিসিবির সরবরাহ বা সরকারের সাধারণ ব্যয় বাড়িয়ে অথবা শুল্ক্ক ও কর সুবিধা দিয়ে মানুষের স্বস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতি নিতে হবে। আর আসন্ন বাজেটে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে। যাতে পিছিয়ে পড়া মানুষ কাজের সুযোগ পায়। জিডিপি প্রবৃদ্ধি নয়, কর্মসংস্থানকেই বাজেটের মূল লক্ষ্যে রাখতে হবে। এ ছাড়া পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ করা অর্থ কতটা কোথায় খরচ হয়েছে- তার বিবরণী প্রকাশেরও দাবি জানান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

আলোচনায় করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে শিশু শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানোর পরামর্শ দেন ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের পরিচালক টনি মাইকেল গোমেজ। তিনি বলেন, শিশুশ্রম রোধ, পুষ্টি নিশ্চিত করা, শিশুবিবাহ বন্ধ করতেও জরুরি উদ্যোগ দরকার।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক সীমা মোসলেম বলেন, করোনার অভিঘাত নারীদের ওপর বেশি হয়েছে। তাই নারীদের জন্য বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, হিজড়াদের সঠিক সংজ্ঞা প্রণয়ন হয়নি। ফলে বাজেটে কার জন্য কত বরাদ্দ হচ্ছে সেটা পরিস্কার নয়। এ ধরনের জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কত তা জানার জন্য একটি শুমারি হওয়া দরকার।

প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ বাড়ানোর দাবিজানান সেন্টার ফর সার্ভিসেস অ্যান্ড ইনফরমেশন অন ডিজেবিলিটির নির্বাহী পরিচালক খন্দকার জহুরুল আলম।

বোগাজান আদর্শ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাধন কুমার সরকার বলেন, বেসরকারি স্কুলগুলোর জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখতে হবে। এসব স্কুলের শিক্ষক ও কর্মীদের জীবনমান উন্নয়নে বরাদ্দ রাখা দরকার।

লবনপানির জন্য ধান নষ্ট হয়ে যায় বলে উল্লেখ করেন পটুয়াখালীর কলাপাড়ার কৃষক আব্দুল আজিজ। তিনি বলেন, এ সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিতে হবে।

স্যোসালিষ্ট লেবার ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব বুলবুল বলেন, পরিবহন শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই, কাজের নিশ্চয়তা নেই। নির্মাণ খাতের শ্রমিকদেরও একই অবস্থা। শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করার ব্যবস্থা থাকতে হবে।

কৃষির বাজেট কৃষকবান্ধব করার দাবি জানিয়ে অক্সফাম ইন বাংলাদেশের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার মোস্তফা বলেন, পরিকল্পনা হোক কৃষককে নিয়ে। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করা হোক।

কর্ডএইডের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ সাকিব নবী বলেন, দরিদ্রদের বড় অংশ কৃষক। ফলে কৃষির উন্নয়ন হলে দারিদ্র্য পরিস্থিতির উন্নতি হবে। অন্যদিকে কৃষিকে আকর্ষণীয় খাতে রূপান্তর করা না গেলে ঝুঁকি বাড়বে।

জাতীয় হকার্স ফেডারেশনের সভাপতি আরিফ চৌধুরী বলেন, হকাররা সড়কে বসে দোকানদারি করে, এজন্য টাকা দিতে হয়। সরকার হকারদের পরিচয়পত্র দিয়ে এবং কোথায় বসতে কত ভাড়া দিতে হবে তার নীতিমালা করে রাজস্ব আয় করতে পারে।