- অর্থনীতি
- জালিয়াতির ঋণে সুদ মওকুফ করা যাবে না
জালিয়াতির ঋণে সুদ মওকুফ করা যাবে না

যত প্রভাবশালীই হোক, কারও ঢালাওভাবে ঋণের সুদ মওকুফ করতে পারবে না ব্যাংক। কোনো অবস্থায় মূল ঋণ, জালিয়াতির মাধ্যমে সৃষ্ট এবং ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণের সুদ মওকুফ করা যাবে না। ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় মাফ করা যাবে না। তবে ঋণ গ্রহীতার মৃত্যু বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কিংবা দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে এ ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল করা যাবে। গতকাল এ বিষয়ে নীতিমালা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় না নিয়ে বিভিন্ন গ্রাহকের সুদ মওকুফ করা হচ্ছে। এতে সুদ মওকুফ সুবিধা পাওয়ার জন্য গ্রাহকদের মধ্যে নির্ধারিত সময়ে ব্যাংকের পাওনা পরিশোধে অনাগ্রহ সৃষ্টি হতে পারে, যা ব্যাংকিং খাতে সার্বিক ঋণ শৃঙ্খলার পরিপন্থি। এ অবস্থায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যাংকের পাওনা পরিশোধে গ্রাহকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি, সামগ্রিক ঋণ শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণে আরোপিত, অনারোপিতসহ সব ধরনের সুদ মওকুফে নতুন নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে।
কোনো ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক এবং তার পরিবারের সদস্য বা পরিচালকের স্বার্থ-সংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ঋণের সুদ মওকুফে অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমতি নিতে হবে। রাষ্ট্রীয় মালিকানার বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের ক্ষেত্রে এ নির্দেশনার পাশপাশি সরকার থেকে সময়ে সময়ে জারি করা নির্দেশনা মানতে হবে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোনো অবস্থায় মূল ঋণ মওকুফ করা যাবে না। জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সৃষ্ট ঋণ এবং ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণ গ্রহীতার ঋণের সুদ মওকুফ করা যাবে না। আবার ব্যাংকের আয় খাত বিকলন তথা একবার আয় খাতে নেওয়ার পর আর সুদ মওকুফ করা যাবে না। ঋণের সুদ মওকুফ সুবিধা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ অনুমোদিত হতে হবে। তবে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের সুদ মওকুফের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের ওপর দেওয়া যাবে। সুদ মওকুফের ক্ষেত্রে ব্যাংকের তহবিল ব্যয় আদায় নিশ্চিত করতে হবে।
সাধারণভাবে তহবিল ব্যয় মওকুফ করা যাবে না। তবে কিছু ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল করা যাবে। বিশেষ করে তিন বছর ধরে বন্ধ থাকা প্রকল্পে ছাড় দেওয়া যেতে পারে। ঋণের জামানত, সহজামানত, প্রকল্প সম্পত্তি এবং প্রকল্প উদ্যোক্তাদের ব্যক্তিগত সম্পদ বিক্রি থেকেও তহবিল ব্যয় আদায় সম্ভব না হলে, আইনগতসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য ব্যবস্থার পরও পাওনা আদায় করা না গেলে, ঋণ গ্রহীতার মৃত্যু অথবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারি, মড়ক, নদীভাঙন বা দুর্দশাজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি যৌক্তিক কারণে ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে শর্ত শিথিল করা যাবে।
নীতিমালায় বলা হয়, তহবিল ব্যয় আদায়ের শর্ত শিথিল করার যৌক্তিকতা নিশ্চিত করতে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগের মাধ্যমে নিরীক্ষা করে ইন্টারনাল কন্ট্রোল অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স বিভাগের প্রধানের মতামত নিতে হবে। যেসব ঋণে আর্থিক বিবরণী প্রণয়ন আবশ্যক, তাদের সর্বশেষ তিন বছরের বিবরণী পর্যালোচনা করে মূলধন ইতিবাচক হলে সুদ মওকুফ হবে না। সুদ মওকুফে ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার ওপর প্রভাব পর্যালোচনা করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সুদ মওকুফ সংক্রান্ত নিজস্ব নীতিমালা করতে হবে।
মন্তব্য করুন