- অর্থনীতি
- দুই লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন
দুই লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন

আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে দুই লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। প্রকল্পের মোট সংখ্যা ১ হাজার ৪৪০টি। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় নতুন এডিপি অনুমোদন দেওয়া হয়। এর অতিরিক্ত ৯ হাজার ১৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোর জন্য। এনইসি সভাপতি হিসেবে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সংযুক্ত হন তিনি। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এনইসির বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
অনুমোদিত এডিপি চলতি অর্থবছরের মূল এডিপির তুলনায় ৯ দশমিক ২১ শতাংশ বেশি। আর সংশোধিত এডিপির তুলনায় বেশি ১৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ। নতুন এডিপিতে প্রকল্প সাহায্য বা বিদেশি ঋণের পরিমাণ ৯৩ হাজার কোটি টাকা। এটি চলতি অর্থবছরের মূল এডিপিতে এ ধরনের অর্থায়নের তুলনায় ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি। আর সংশোধিত এডিপির তুলনায় বেশি ৩২ দশমিক ৩৮ শতাংশ। অন্যদিকে, সরকারের নিজস্ব উৎস থেকে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। এ বরাদ্দ চলতি অর্থবছরের মূল এডিপি এবং সংশোধিত এডিপির তুলনায় ১১ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেশি। সংশোধিত এডিপিতে বিদেশি ঋণের পরিমাণ কমানো হলেও স্থানীয় উৎসের পরিমাণে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি।
আগামী অর্থবছরের এডিপিতে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি), ডেলটা প্ল্যান ও বিভিন্ন খাতভিত্তিক নীতিমালা অগ্রাধিকার পেয়েছে। সুনির্দিষ্ট করে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প, বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট ও আগামী বছর সমাপ্ত ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ নিশ্চিত করা হয়েছে। আয় বৈষম্য হ্রাস হবে- এমন প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দারিদ্র্য নিরসন, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মানবসম্পদ উন্নয়নের মতো মৌলিক বিষয়গুলো লক্ষ্য করে প্রকল্প গ্রহণ এবং বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সম্ভাব্যতা যাচাই হয়েছে- এমন প্রকল্পকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন, অর্থ মন্ত্রণালয় ও সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মধ্যে বৈঠকে বিভিন্ন প্রকল্পের খসড়া বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছে।
এনইসি বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে নতুন এডিপির বিস্তারিত তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম এবং পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রী বলেন, যেসব প্রকল্প দেশের জন্য জরুরি সেগুলোই আগে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন বাজেট সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দলিল। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন লক্ষ্য এবং অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বিবেচনা করেই এবারের এডিপি সাজানো হয়েছে। চলতি অর্থবছর কিংবা আগামী অর্থবছরের এডিপিতে অপ্রয়োজনীয় কিংবা গুরুত্বহীন কোনো প্রকল্প নেই বলে জানান পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের সদস্য প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী।
সর্বোচ্চ বরাদ্দের ১০ প্রকল্প :আগামী অর্থবছরের এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য। প্রায় ১৩ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রকল্পটিতে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচিতে (পিইডিপি-৪)। তৃতীয় সর্বোচ্চ মাতারবাড়ী তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্পে ৬ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। চতুর্থ অবস্থানে থাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পে ৬ হাজার ১৯ কোটি টাকার বরাদ্দ রয়েছে। এর পরই রয়েছে পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্প। এ প্রকল্পে ৫ হাজার ৮০৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সর্বোচ্চ বরাদ্দের পাঁচ খাত :অনুমোদিত এডিপিতে খাত হিসেবে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ ৭০ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা পেয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ। মোট এডিপির প্রায় ২৯ শতাংশ ধরা হয়েছে এ খাতে। এরপর রয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি। এ খাতে বরাদ্দ ১৬ শতাংশ। তৃতীয় সর্বোচ্চ শিক্ষায় বরাদ্দ রয়েছে এডিপির ১২ শতাংশ। গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধা খাত রয়েছে চতুর্থ অবস্থানে। মোট বরাদ্দের ১০ শতাংশ পেয়েছে এ খাত। পঞ্চম শীর্ষ বরাদ্দ পাওয়া স্বাস্থ্য খাতে রয়েছে এডিপির প্রায় ৮ শতাংশ।
মন্তব্য করুন