নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারে প্রায় প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় থাকে মসুর ডাল। কিন্তু তেল, চাল, আটা, ময়দার পর মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় এবার যুক্ত হয়েছে এই পণ্যটিও। গত দুই-তিন দিনের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারে মসুর ডালের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত। ব্যবসায়ীদের দাবি, বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধি এবং দেশে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় মসুর ডালের দাম বেড়েছে। এ ছাড়া ডলারের দামে ঊর্ধ্বগতির প্রভাবও পড়েছে বাজারে।

গতকাল বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মহাখালী কাঁচাবাজার ও তেজকুনি পাড়া এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি কেজি আমদানি করা মসুর ডাল (বড় দানা) ১১০ থেকে ১১৫ টাকা এবং দেশি মসুর ডাল (ছোট দানা) ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ দুই থেকে তিন দিন আগেও আমদানি করা মসুর ডাল (বড় দানা) ১০০ থেকে ১০৫ এবং দেশি মসুর ডাল (ছোট দানা) ১২০ থেকে ১৩০ টাকার মধ্যে কেনা যেত।

এদিকে সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের সর্বশেষ তথ্য বিশ্নেষণ করে দেখা যায়, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আমদানি করা বড় দানার মসুর ডালের দাম এখন গড়ে ৫৭ শতাংশ বেশি। আর দেশি ছোট দানার মসুর ডালে তা ২৪ শতাংশ।

কারওয়ান বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী রব এন্টারপ্রাইজের বিক্রয়কর্মী মো. নাঈম বলেন, গত দুই-তিন দিনের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে কেজিপ্রতি চার থেকে পাঁচ টাকা করে বেড়েছে মসুর ডালের দাম। এ কারণে খুচরা পর্যায়েও দাম বেড়েছে। দাম আরেক দফা বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে মসুর ডাল উৎপাদন হয় দুই লাখ ৬০ হাজার টন। পরের অর্থবছরে উৎপাদন সামান্য
বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৬৬ হাজার টনে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ ৬০ হাজার টন।

বাংলাদেশ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির তথ্যমতে, দেশে বছরে সব ধরনের ডালের চাহিদা রয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ লাখ টনের। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা মসুর ডালের। বছরে ২০ থেকে ২৫ লাখ টন মসুর ডালের প্রয়োজন হয়। সে হিসাবে বছরে ১৮ থেকে ২০ লাখ টনের ডাল আমদানি করতে হয়।

বাংলাদেশ পাইকারি ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শফি মাহমুদ সমকালকে বলেন, ডলারের দাম অনেক বেড়েছে। ফলে আমদানি পর্যায়ে প্রতি কেজি ডালে কিছুদিন আগের তুলনায় ১৫ থেকে ১৮ টাকা বেশি খরচ হচ্ছে। এখন নেপাল থেকে যে ডাল আসছে সেগুলোর কেজিপ্রতি দাম পড়ছে ১২৮ টাকা। যা বাজারে আসলে খুচরা পর্যায়ে দাম আরও বাড়তে পারে। এ ছাড়া দেশের বৃষ্টির কারণে ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কৃষকরাও দাম বাড়িয়েছেন। ফলে দেশি ডালের দামও বাড়ছে। তবে বিশ্ববাজারে দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকায় ডালের দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা তারও।