- অর্থনীতি
- আতঙ্ক ছড়িয়ে চালের বাজার অস্থিরের চেষ্টা
আতঙ্ক ছড়িয়ে চালের বাজার অস্থিরের চেষ্টা
ভোক্তা অধিদপ্তরের সভায় তথ্য

দাম বাড়ার গুজব ছড়িয়ে একটি গোষ্ঠী চালের বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে বৃহস্পতিবারের মধ্যে মজুত পরিস্থিতি জানাতে মিলারদের নির্দেশ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এরপর আগামী সপ্তাহে মিল পর্যায়ে অভিযান চালাবে তারা। অভিযানের ভিত্তিতে অবৈধ মজুতদারদের বিরুদ্ধে মামলা করার ঘোষণা দিয়েছে ভোক্তা অধিদপ্তর।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অধিদপ্তরে আয়োজিত 'চালের মজুত, সরবরাহ এবং মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে মিল মালিক, ব্যবসায়ী ও ভোক্তা পর্যায়ে আলোচনা সভায়' এসব তথ্য জানানো হয়।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ভোজ্যতেলসহ অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রে যেভাবে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে, ঠিক একইভাবে একটি গোষ্ঠী আতঙ্ক ছড়িয়েছে বাজারে। উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে, তাই চালের দাম বাড়বে- এমন তথ্য বাজারে ছড়িয়ে দিয়ে দাম আরও বাড়ানো হচ্ছে। যারা এভাবে বাজারকে অস্থির করার চেষ্টা করছে, তাদের শনাক্ত করা দরকার। সভায় চালের মিল মালিক সিটি, প্রাণ, আকিজ, মেঘনা, বাংলাদেশ এডিবল ওয়েলসহ বিভিন্ন করপোরেট হাউসের কর্মকর্তা এবং পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের পক্ষে কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন বলেন, ক্রয়াদেশ দিলে মিলাররা সময় মতো চাল দেন না। তাঁদের কেউ কেউ বলছেন, উৎপাদন কম হয়েছে। দাম বেড়ে যাবে। তাঁর পরামর্শ, মিলে অভিযান চালাতে হবে। তাছাড়া মিল থেকে চাল কিনে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো প্যাকেটজাত করে বেশি দামে বাজারে বিক্রি করছে। একই মানের খোলা চালের চেয়ে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর চালের দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি।
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মন্টু বলেন, বড় কোম্পানিগুলো হাজার হাজার টন ধান রেখেছে গুদামে। বিক্রি করছে না। তাদের কেউ কেউ বলছে, আগে সরকারকে চাল দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে। এরপর পাইকারদের দেওয়া হবে। কোনো কোনো মিলার ঢাকার পাইকারি চাল ব্যবসায়ীদের জানিয়েছেন, চালের কেজি ১০০ টাকায় পৌঁছাবে। ফলে পাইকাররাও চালের সংগ্রহ বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন। এভাবে কিছুটা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাগর অটো রাইস মিলের মালিক মুনসুর রহমান বলেন, এবার ধানের ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শ্রমিক সংকটে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। অন্য বছরের চেয়ে শ্রমিক খরচ বেড়েছে। ধানের দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে অন্য বছরের এই সময়ের চেয়ে এ বছর বিক্রি দ্বিগুণ বেড়েছে। কোনো মিলে চাল মজুত নেই। ক্রেতাদের সিরিয়াল লেগে গেছে। ক্রেতারা কেন এত বেশি চাল কিনছেন তা বুঝতে পারছি না।
খুচরা ব্যবসায়ীদের ওপর কিছুটা দোষ চাপিয়ে তিনি বলেন, ১০ থেকে ১৫ দিন আগে মিলগেটে ৫০ কেজি চালের যে বস্তা ২৮০০ থেকে ৩০০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে তা খুচরা বাজারে কীভাবে ৩৪০০ থেকে ৩৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে?
সিটি গ্রুপের উপদেষ্টা অমিতাভ চক্রবর্তী বলেন, করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো বড়জোর ৮ থেকে ৯ শতাংশ চাল সংগ্রহ করে বিক্রি করে। তাদের কারণে বাজারে এত বড় প্রভাব পড়ার কথা নয়। প্রাণ গ্রুপের সিনিয়র ম্যানেজার নিয়াজ মোর্শেদ বলেন, ধান ও চাল কেনায় মৌসুমি ব্যবসায়ী তৈরি হয়েছে। তাঁরা চাল কিনে বিভিন্ন গুদামে মজুত রাখছেন। তিনি জানান, আগে মাসে তাঁদের প্যাকেটজাত চাল ৫০০ থেকে ৬০০ টন বিক্রি হলেও গত দুই মাসে তা অর্ধেকে নেমেছে।
ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, প্যাকেটজাত করার পর চালের দাম দ্বিগুণের কাছাকাছি কীভাবে হয় সেটা খতিয়ে দেখা হবে। করপোরেট কোম্পানিগুলো চালের বাজার কতটুকু নিয়ন্ত্রণ করছে, অর্থাৎ প্যাকেটজাত চালের শেয়ার কত অংশ রয়েছে, তাও তদন্ত করা হবে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সফিকুজ্জামান বলেন, সরকার এ বছর মোট ১১ লাখ টন চাল কিনবে। এর জন্য এত আতঙ্ক তৈরি হওয়ার কথা নয়। মিল মালিকদের কাছে কী পরিমাণ চাল মজুত আছে, সে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে মিল মালিকদের মজুত পরিস্থিতির তথ্য ভোক্তা অধিদপ্তরকে জানাতে হবে। এরপর আগামী সপ্তাহে চালের মিলে অভিযান চালানো হবে।
অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, অবৈধ মজুতদারদের অনেক সতর্ক করা হয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে জরিমানার পাশাপাশি এখন মামলা করার পর্যায়ে যাওয়া হবে।
মন্তব্য করুন