- অর্থনীতি
- দেশের অর্জনে মূল ভূমিকা রেখেছেন শ্রমজীবী মানুষ
বিআইডিএসের আলোচনা
দেশের অর্জনে মূল ভূমিকা রেখেছেন শ্রমজীবী মানুষ

সোমবার বিআইডিএস আয়োজিত বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বক্তারা
বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির নেপথ্যের তিন চালিকাশক্তি হলো- কৃষিতে উচ্চ ফলনশীল ধান, শ্রমনিবিড় রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্প এবং বিদেশে কর্মসংস্থান থেকে রেমিট্যান্স। আবার এ তিনের মুখ্য চালক শ্রম এবং শ্রমজীবী মানুষ। তবে উন্নয়নের হিস্যায় এ শ্রমজীবী মানুষের ভাগ খুবই কম। স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে সাড়ে সাত কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা ছিল না। এখন ১৮ কোটি মানুষের খাদ্যের চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে। আশির দশকেও যেখানে দাতা দেশগুলোর ঋণ অনুদান ছাড়া উন্নয়ন বাজেট করা কষ্ট হতো, এখন নিজেদের অর্থায়নেই উন্নয়ন বাজেটের বড় অংশ হচ্ছে। সত্তরের দশকে ৮০ শতাংশের বেশি শ্রম যেখানে কৃষিতে নিয়োজিত ছিল, এখন তা ৩৬ শতাংশে নেমেছে। নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে দেশ এগিয়েছে। তবে বৈষম্য বেড়েছে তার থেকেও বেশি গতিতে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রুশিদান ইসলাম রহমান, রিজওয়ানুল ইসলাম এবং কাজী সাহাব উদ্দিনের লেখা ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিধারা: সুবর্ণজয়ন্তীতে ফিরে দেখা’ শীর্ষক বইয়ে এভাবেই তুলে ধরা হয়েছে স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের অর্থনীতি ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার পটপরিবর্তন।
সোমবার বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) বইটির প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। সঞ্চালনা করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন।
প্রকাশিত বইয়ের বিভিন্ন অধ্যায়ে যেসব বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি, শিল্পায়ন ও সেবা খাত, কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য, নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ইত্যাদি।
রিজওয়ানুল ইসলাম জানান, সত্তর ও আশির দশকে বার্ষিক জিডিপির প্রবৃদ্ধি যেখানে ৪ শতাংশের নিচে ছিল, তা ক্রমে বেড়ে করোনার বছরের আগে ৮ শতাংশ ছাড়ায়। এ ক্ষেত্রে কৃষি, শ্রমনির্ভর রপ্তানি শিল্প এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্স মূল ভূমিকা রেখেছে। তবে এক সময়ে কৃষিনির্ভর অর্থনীতি এখন উৎপাদনমুখী শিল্পের দিকে ঝুঁকেছে। ১৯৮০-৮১ অর্থবছরের চেয়ে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ধানের উৎপাদন বেড়েছে আড়াই গুণ। তৈরি পোশাক খাতে সৃষ্টি হয়েছে প্রায় ৪০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান। মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান মাধ্যম হয়েছে এটি। অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষির ভূমিকা নিয়ে সংশ্নিষ্টদের মতভেদ আছে। অনেকে মনে করেন, প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কৃষির অবদান কমবে, শিল্পে বাড়বে। তবে কৃষির অবদান ছাড়া প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা সম্ভব নয়।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের যেখানে অভিজ্ঞতা ভালো, সেখানে আরও কী করে বৈচিত্র্য আনা যায়, তা নিয়ে ভাবা যেতে পারে।
পিপিআরসির চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, কৃষক ফসল ফলাচ্ছেন, কিন্তু তারা তাদের ন্যায্য হিস্যা কি পাচ্ছেন? শ্রমিক কাজ করছেন, প্রবাসীরা কষ্ট করে টাকা পাঠাচ্ছেন- তারা কি যথাযথ মর্যাদা পাচ্ছেন? যাদের শ্রমে-ঘামে অর্থনীতি বড় হচ্ছে, তারা সমৃদ্ধি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
ড. বিনায়ক সেন বলেন, করোনায় প্রথম লকডাউনে দারিদ্র্যের হার বেড়ে গিয়েছিল সাড়ে ৯ শতাংশ থেকে ৪২ শতাংশে। ডেলটা ধরনের সময় তা কমে ৩৬ শতাংশ এবং ওমিক্রন ধরন ছড়িয়ে পড়ার সময় হয় ২১ শতাংশ। এখন তা ১৬ শতাংশ। এ পরিসংখ্যান বলছে, আমরা কিছুটা বেশি দারিদ্র্য পরিস্থিতির মধ্যে আছি। তবে এতটা বেয়াড়া পরিস্থিতির মধ্যেও নেই। এখানে মানুষের মধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তিও তৈরি হয়েছে।
সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, রাজনৈতিক কঠিন মতপার্থক্যের মধ্যে অর্থনৈতিক ঐকমত্যও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বর্তমানে একদিকে সামাজিক সুরক্ষার নামে দরিদ্রদের কিছুটা সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। আবার বিদেশে টাকা পাচারকারীদের বৈধভাবে টাকা ফিরিয়ে আনার সুযোগ দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেন, কর্মসংস্থান ও অর্থনীতির সামগ্রিক উন্নতি হলে নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়বে। এখন মাধ্যমিক শিক্ষায় ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের অংশগ্রহণ বেশি।
মন্তব্য করুন