
বাজেটে কর কাঠামোতে যেসব পরিবর্তন আনা হয়েছে, তাতে সাধারণভাবে প্রস্তাবিত বাজেটকে ব্যবসা ও বিনিয়োগ সহায়ক বলা যায়। এতে সম্ভাবনাময় খাতে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবে। তবে মূল্যস্ফীতির চাপ সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা এবং সমাজের দরিদ্র শ্রেণির কষ্ট লাঘবে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজন ছিল।
বাজেট-পরবর্তী এক আলোচনা সভায় রোববার এমন মতামত দেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজ এবং গবেষণা সংস্থা পিআরআইর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। হোটেল শেরাটন বনানীতে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচেম) এর আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। সভা সঞ্চালনা করেন অ্যামচেমের সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ।
আলোচনায় উঠে আসা মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অভিঘাতে পণ্য সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় মূল্যস্ফীতির চাপ রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে অর্থনীতির পতন ঠেকাতে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। সামাজিক স্থিতিশীলতা মেনে চলতে পারলে অর্থনৈতিক পতন ঠেকানো সম্ভব। এম এ মান্নান বলেন, ‘সামনে যদি বড় ধরনের কোনো মন্দা চলে আসে, তাহলে আমি আওয়ামী লীগের মন্ত্রী হিসেবে নয়, দেশের একজন জ্যেষ্ঠ ও সচেতন নাগরিক হিসেবে বলছি- দয়া করে নিজেরা নিজের পায়ে কুড়াল আপনারা মারবেন না। দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করা শেখ হাসিনার একার দায়িত্ব নয়, সবার দায়িত্ব আছে। আমরা সবাই মিলে এই একটা ক্ষেত্রে যাতে ঐক্যবদ্ধ থাকি।’
মির্জ্জা আজিজ বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির অভিঘাত থেকে দেশের দরিদ্র মানুষকে আরেকটু সুরক্ষা দেওয়া যেত। ভর্তুকি এবং প্রণোদনার বরাদ্দ আরও কিছুটা বাড়ানো যেত।’ কর কাঠামোর প্রশংসা করে তিনি বলেন, করপোরেট কর কমানোর ফলে নিঃসন্দেহে দেশে বিনিয়োগে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে বিনিয়োগ আকর্ষণে কারিগরি দক্ষতাসম্পন্ন শ্রমিকের অভাব একটা বড় অপূর্ণতা। বাজেটের অর্থায়নে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ১ লাখ কোটি টাকার বেশি ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রার সমালোচনা করে তিনি বলেন, বেসরকারি ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে যদি সরকারই এত বিপুল অর্থ নিয়ে নেয়, তাহলে বেসরকারি বিনিয়োগ ব্যাহত হবে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাজেটে কর কাঠামোতে যেসব পরিবর্তন আনা হয়েছে, তা সাধারণত ব্যবসা সহায়ক। বিনিয়োগ আকর্ষণেও সহায়ক হবে। তবে মূল্যস্ম্ফীতির চাপ সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য আরও কিছু করার সুযোগ ছিল বাজেটে। সামাজিক সুরক্ষা খাতের বেশিরভাগ কর্মসূচিতে ৫০০ টাকা হারে ভাতা চলছে বছরের পর বছর। সামান্য কিছু টাকা বাড়িয়ে দিলে তাদের প্রকৃত আয় অন্তত কমত না।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, আন্তর্জাতিক লেনদেনে চলতি হিসাবের ঘাটতি এবং মূল্যস্ফীতির চাপে দেশের অর্থনীতি একটা সংকটকালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ বাস্তবতায় জিডিপির হিসাবে বাজটের আকার কিছুটা ছোট করায় অভ্যন্তরীণ চাহিদা হয়তো কিছুটা কমবে। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির কারণে চাহিদা সীমিত রাখা সহজ হবে। তবে চাহিদা সীমিত রাখা এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে মুদ্রানীতিই যথোপযুক্ত হাতিয়ার। মুদ্রার বিনিময় হারের স্থিতিশীল রাখার ক্ষেত্রেও এর সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি ব্যাংকের সুদের হারের সীমা তুলে দেওয়ার পরামর্শ দেন। এ সীমা আর্থিক খাতে সংকট সৃষ্টি করছে বলে তিনি মনে করেন।
অ্যামচেমের পরিচালনা পর্ষদের বর্তমান এবং সাবেক নেতারা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন