নাগরিক প্ল্যাটফর্মের ব্রিফিং
সংকটে যাদের সহায়তা দরকার বাজেটে তারাই উপেক্ষিত:
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২২ | ২১:২৮ | আপডেট: ১৯ জুন ২০২২ | ২১:৩০
জিনিসপত্রের দামের চাপে চিড়েচ্যাপ্টা অবস্থা প্রান্তিক মানুষের। এসব মানুষের কথা ভেবে বাজেট হবে- এমন স্বপ্ন এবারও স্বপ্নই থেকে গেল। সংকটে থাকা মানুষের কথা না ভাবলেও করপোরেট করে ছাড়, বিদেশে পাচার করা অর্থ সাদা করার সুযোগ রেখে আদতে ধনী শ্রেণির জন্য বাজেট করেছে সরকার। এ বাজেট অনৈতিকতা ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবে। সুরক্ষা দেবে অসাংবিধানিক ব্যবস্থা, বৈষম্য ও অর্থ পাচারকে। এ বাজেট কথায় যত বড়, কাজের বেলায় ততটাই ছোট। বর্তমান সংকটে যাদের সহযোগিতা দরকার, বাজেটে তারাই উপেক্ষিত।
রোববার রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টারে প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটের ওপর মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের পক্ষ থেকে এমন মত এসেছে। 'পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য বাজেটে কী আছে' শীর্ষক এ আয়োজনে মূল বিশ্নেষণ উপস্থাপন করেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতিতে এখন যে চাপ, তা গত ১৫ বছরে ছিল না। এ চাপ মোকাবিলায় মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা, আর্থিক ব্যবস্থাপনা ঠিক করা এবং লক্ষ্য-নির্দিষ্টভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষের কষ্ট লাঘবে পদক্ষেপ নেওয়া- এই তিন লক্ষ্যকে সামনে রেখে বাজেট করা হবে, এমন প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু ঘোষিত বাজেটে এর প্রতিফলন মিলছে না। অর্থমন্ত্রী তার বাজেটে চলমান ছয়টি চ্যালেঞ্জকে খুবই সঠিকভাবে চিহ্নিত করলেও সেগুলো মোকাবিলা কীভাবে করবেন, তার সুচিন্তিত পদক্ষেপ নিতে পারেননি।
বন্যা পরিস্থিতি দরিদ্র মানুষের সংকট বাড়াবে- এমন শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, সরকার কিছু দরিদ্র মানুষকে মাসে ৫০০ টাকা করে দিচ্ছে। এ টাকা দিয়ে কী হয়? ফি বছর জাতীয় আয় বাড়লেও এ সংখ্যা কোনোক্রমে বাড়ছে না। এটি অন্তত হাজার টাকায় উন্নীত করা দরকার। আবার দেশের অর্থনীতিতে মধ্যবিত্ত শ্রেণি বড় অবদান রাখলেও তাদের জন্য কোনো সুখবর নেই। করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হয়নি। মনে হচ্ছে মধ্যবিত্ত শ্রেণি রাজনৈতিকভাবে অভিভাবকত্বহীন।
খাদ্য, সার এবং জ্বালানি তেল- মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে এ তিন পণ্যের প্রভাব সবচেয়ে বেশি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এগুলোর মূল্য নিয়ন্ত্রণে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তার সুনির্দিষ্ট ঘোষণা নেই। বরং গ্যাসের দাম বাড়ানোর পর বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ইঙ্গিত আছে। এর পরই হয়তো জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হবে, যা মূল্যস্ফীতিকে আরও উস্কে দেবে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দাম বৃদ্ধি সত্ত্বেও চাইলে ভারতের মতো আমদানি শুল্ক কমিয়ে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর পদক্ষেপ সরকার নিতে পারত।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রার বিনিময় হার বাড়ালে সুদহারও বাড়াতে হবে- এটাই অর্থনীতির সাধারণ সূত্র। অথচ এটা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। অর্থনীতিতে কৃষির অবদান কমছে। কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে; কিন্তু এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেই। গত বছরে ব্যক্তির বিনিয়োগ কমার ধকল সরকার নিজে ব্যয় ও বিনিয়োগ বাড়িয়ে পোষানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু এ বছর সরকার নিজেই ব্যয় কমাচ্ছে। কারণ বাড়তি ব্যয়ের সক্ষমতা হারিয়েছে। তার পরও বলা হচ্ছে, জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়বে। এটা কী করে সম্ভব?
সংকট মোকাবিলায় প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের উপকার হয়, এমন ক্ষেত্রে ভর্তুকি বাড়িয়ে বিদ্যুতে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে দেওয়া খারাপ ভর্তুকি কমানোর পরামর্শ দেন তিনি। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ঠিক রাখতে বিদেশি ঋণ দ্রুত ছাড় করার চেষ্টা করা, প্রয়োজনে আইএমএফের কাছ থেকে বাজেট সহায়তা নেওয়ার প্রস্তাব করেন।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিদেশে পাচার করা টাকাকে সাদা করার সুযোগ করে দেওয়ার কারণে আন্তর্জাতিকভাবে সরকার চাপের মুখে পড়বে। যদিও এভাবে টাকা ফেরত আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। এভাবে বিদেশ থেকে টাকা ফেরত আনা যায় না।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার বলেন, করোনায় সবাই বাসায় থেকে কাজ করলেও গার্মেন্ট শ্রমিকরা ঝুঁকি নিয়ে সশরীরে কাজ করেছেন, অর্থনীতিকে সচল রেখেছেন। কিন্তু সংকটে তাঁদের পাশে কেউ নেই। সেভ দ্য চিলড্রেনের পরিচালক রিফাতা বিন সাত্তার বলেন, শিশুদের জন্য কোনো বাজেট খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক কাসফিয়া ফিরোজ বলেন, বাল্যবিয়ে বন্ধে সরকার আইন করলেও এটা বাস্তবায়ন কী করে হবে, তার জন্য পদক্ষেপ বাজেটে নেই।