- অর্থনীতি
- উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থ ছাড়ে রেকর্ড
উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থ ছাড়ে রেকর্ড

বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থ ছাড়ে রেকর্ড হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৭৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার ঋণ ও অনুদান পাওয়ার। এর মধ্যে অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মার্চ) উন্নয়ন সহযোগীরা ছাড় করেছে প্রায় ৮৪২ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৭ শতাংশ বেশি। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী যার পরিমাণ ৭৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর আগের কোনো অর্থবছরের পুরো সময়েও এত অর্থ ছাড় হয়নি। এমনকি ৮ বিলিয়ন বা ৮০০ কোটি ডলার ছাড়ায়নি।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) বৃহস্পতিবার বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি ও ছাড়ের হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, ১১ মাসে মোট ছাড় হয়েছে ৮৪১ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এর মধ্যে ঋণ ৮২২ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। অনুদানের পরিমাণ ১৮ কোটি ৮৫ লাখ ডলার, যার মধ্যে খাদ্য সহায়তা রয়েছে ২৫ লাখ ডলারের। সরকার এ সময়ে সুদে আসলে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করেছে ১৮৮ কোটি ৬৭ লাখ ডলার। এর মধ্যে আসল ১৪১ কোটি ৮৩ লাখ ডলার এবং সুদ ৪৬ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। ইআরডির কর্মকর্তারা আশা করছেন, বিদায়ী অর্থবছরে মোট ছাড়ের পরিমাণ ৯০০ কোটি ডলার ছাড়াবে।
ইআরডির তথ্যমতে, গত অর্থবছরের (২০২০-২১) প্রথম ১১ মাসে উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থ ছাড়ের পরিমাণ ছিল ৫৭২ কোটি ৬১ লাখ ডলার। এর আগের দুটি অর্থবছরের পুরো সময়ে যার পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৭১১ কোটি এবং ৭২১ কোটি ডলার। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে সর্বাধিক প্রায় ২০৭ কোটি ৯৩ লাখ ডলারের ঋণ ছাড় করেছে এডিবি, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৮৬ কোটি ৫২ লাখ ডলার। এর বাইরে জাপান প্রায় ১৭৮ কোটি ডলার, বিশ্বব্যাংক ১৫৩ কোটি ৬৩ লাখ ডলার এবং রাশিয়া ১১৫ কোটি ডলার ছাড় করেছে। চীন ও ভারত ছাড় করেছে যথাক্রমে ৮০ কোটি ও ২২ কোটি ডলার।
ইআরডি কর্মকর্তারা জানান, কয়েকটি মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন প্রায় শেষ পর্যায়ে আসায় এসব প্রকল্পে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও দেশ অর্থ ছাড় বেড়েছে। এ ছাড়া উন্নয়ন সহযোগীরা বাজেট সহায়তা বাবদ ঋণ ছাড়ও বাড়িয়েছে।
মতামত জানতে চাইলে গবেষণা সংস্থা পিআরআইর নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর সমকালকে বলেন, এবার করোনার কারণে অনেক বাজেট সহায়তা বেড়েছে। প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তা এসেছে। বাজেট সহায়তা সাধারণত খুব দ্রুত ছাড় হয় এবং করোনার জরুরি কেনাকাটার কারণে বেড়েছে। তবে প্রকল্প বাস্তবায়ন পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। পাইপলাইনে প্রচুর অর্থ আছে। তিনি মনে করেন, সার্বিকভাবে বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান বৃদ্ধি এ মুহূর্তে অর্থনীতির জন্য ভালো। এর ফলে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে বেশি সুদের অর্থায়ন কম নেওয়া লাগে। তাঁর মতে, আগামী অর্থবছর বৈদেশিক ঋণ ছাড়ের ক্ষেত্রে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১২ থেকে ১৩ বিলিয়ন ডলারের, যা চ্যালেঞ্জিং হবে বলে মনে হচ্ছে। কারণ, করোনার কারণে প্রচুর পরিমাণ বাজেট সহায়তা এবার পাওয়া গেছে। আগামী অর্থবছরে হয়তো এত পাওয়া যাবে না।
এদিকে, ছাড়ের পাশাপাশি গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে প্রতিশ্রুতিও সরকার বেশি পেয়েছে। ১১ মাসে প্রতিশ্রুতি পাওয়ার লক্ষ্য ছিল ৭৭৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার। পাওয়া গেছে ৫৯১ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে বেড়েছে ১০ শতাংশ।
মন্তব্য করুন