বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ কমাতে আমদানিতে আরও রাশ টানল বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে গাড়ি, স্বর্ণ, টিভি, ফ্রিজসহ ২৭ ধরনের পণ্য আমদানির এলসি মার্জিন নির্ধারণ করা হয়েছে শতভাগ। ঋণের টাকায় এ অর্থ দেওয়া যাবে না। এর মানে, এলসি খোলার সময়েই আমদানিকারকের নিজস্ব উৎস থেকে পুরো অর্থ জমা দিতে হবে। আর জ্বালানি, অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্য, শিল্পে ব্যবহার্য কাঁচামাল, মূলধনি যন্ত্রপাতিসহ কিছু পণ্য বাদে অন্যান্য ক্ষেত্রে এলসি মার্জিনের নূ্যনতম হার হবে ৭৫ শতাংশ।

গতকাল সোমবার রাতে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে, যা আজ মঙ্গলবার থেকেই কার্যকর হবে। এর আগে গত ১০ মে এক নির্দেশনার মাধ্যমে নির্ধারিত কিছু পণ্যে এলসি মার্জিনের নূ্যনতম হার ৫০ ও ৭৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। গতকালের নির্দেশনার মাধ্যমে আগের সার্কুলার বাতিল করে বলা হয়েছে, করোনার দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব এবং বহির্বিশ্বে সাম্প্রতিক যুদ্ধ প্রলম্বিত হওয়ায় চলমান অর্থনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে দেশের মুদ্রা ও ঋণ ব্যবস্থাপনা অধিকতর সুসংহত করতে ঋণপত্রে নগদ মার্জিন হার পুনর্নির্ধারণ করা হলো।

সাধারণভাবে পণ্য দেশে আসার পর এলসি মূল্য পরিশোধ করেন আমদানিকারক। তবে আমদানি ঋণপত্র খোলার সময় গ্রাহককে ব্যাংকে পণ্যমূল্যের একটি অংশ অগ্রিম জমা দিতে হয়, যাকে এলসি মার্জিন বলে। এই মার্জিনের বিষয়টি নির্ধারিত হয় ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে। ব্যাংকের সঙ্গে গ্রাহকের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ভালো হলে নূ্যনতম ১০ শতাংশ মার্জিনেও এলসি খোলা হয়। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে শূন্য মার্জিনেও এলসি খোলা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে আজ থেকে মোটরকার, ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিকস হোম অ্যাপ্লায়েন্স, স্বর্ণ ও স্বর্ণালংকার, মূল্যবান ধাতু, মুক্তা, তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য, পাটজাত পণ্য, প্রসাধনী, আসবাবপত্র, সাজসজ্জা সামগ্রী, ফল, ফুল, নন সিরিয়াল ফুড যেমন অশস্য খাদ্যপণ্য, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যদ্রব্য ও পানীয় যেমন টিনজাত খাদ্য, চকলেট, বিস্কুট, জুস, সফ্‌ট ড্রিংকস, অ্যালকোহল জাতীয় পানীয়, তামাক, তামাকজাত বা এর বিকল্প পণ্যসহ অন্যান্য বিলাস জাতীয় পণ্যের আমদানি ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ নগদ মার্জিন সংরক্ষণ করতে হবে।

এতে আরও বলা হয়েছে, শিশুখাদ্য, অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্য, জ্বালানি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর স্বীকৃত জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, সরঞ্জামসহ চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে ব্যবহার্য দ্রব্যাদি, উৎপাদনমুখী স্থানীয় শিল্প ও রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য সরাসরি আমদানি করা মূলধনি যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল, কৃষি খাতসংশ্নিষ্ট পণ্য এবং সরকারি অগ্রাধিকার পাওয়া প্রকল্পে ব্যবহারের জন্য অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ছাড়া অন্য সব পণ্যের আমদানি ঋণপত্র স্থাপনে নূ্যনতম ৭৫ শতাংশ নগদ মার্জিন সংরক্ষণ করতে হবে। উভয় ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় মার্জিন গ্রাহকের নিজস্ব উৎস থেকে নিতে হবে। অর্থাৎ ব্যাংকে আমদানিকারকের অনুকূলে বিদ্যমান কোনো ঋণ হিসাব কিংবা নতুন কোনো ঋণ সৃষ্টির মাধ্যমে মার্জিন দেওয়া যাবে না।

সংশ্নিষ্টরা জানান, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ধারাবাহিক পতন ঠেকাতে এমন উদ্যোগ নিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত মে মাস পর্যন্ত ৩০ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে। চলতি হিসাবের ভারসাম্যেও ১৭ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি হয়েছে। পরিস্থিতি সামলাতে শুধু গত অর্থবছরে বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ৭৬২ কোটি ১৭ লাখ ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে গতকাল ৪১ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এর আগে গত বছরের আগস্টে রিজার্ভ উঠেছিল ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলার।