- অর্থনীতি
- বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বাড়াতে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ
সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর চেয়ারম্যান
বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বাড়াতে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ

এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম- ফাইল ছবি
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেছেন, বৈদেশিক মুদ্রার মজুত সমৃদ্ধ করতে চলতি অর্থবছরের বাজেটে করদাতাদের বিদেশে থাকা অপ্রদর্শিত অর্থ বা সম্পদ প্রদর্শনের দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এ সুযোগ কালো টাকার মালিক বা পাচারকারীদের জন্য নয়। এনবিআর মনে করে, বিদেশে অনেক বাংলাদেশি আছেন যাঁদের বৈধ আয়ও আয়কর রিটার্নে উল্লেখ নেই। তাঁদের জন্য এ সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এতে দেশের অর্থনীতি যেমন লাভবান হবে, তেমনি বৈদেশিক মুদ্রার মজুতও সমৃদ্ধ হবে।
রোববার এনবিআর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কোন নীতিতে কার্যক্রম পরিচালনা করছে, সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে কীভাবে অবদান রাখছে, বেসরকারি খাতের ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করা এবং স্থানীয় শিল্পের বিকাশ বিষয়ে কী ধরনের নীতি নিয়ে এগোচ্ছে এবং স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পরে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা কেমন হবে সেসব বিষয় তুলে ধরেন। পাশাপাশি চলতি অর্থবছরের বাজেটে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং গত অর্থবছরের রাজস্ব পরিস্থিতি কেমন ছিল সে সম্পর্কেও কথা বলেন তিনি। এ সময় কাস্টমস, ভ্যাট, আয়কর বিভাগের সদস্যরা ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এবারের বাজেটে করদাতার বিদেশে থাকা অপ্রদর্শিত অর্থ বা সম্পদ প্রদর্শনে অ্যামনেস্টি বা দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এটা নিয়ে দেশে অনেক সমালোচনা হয়েছে। বলা হয়েছে, কালো টাকা সাদা করা বা পাচার করা টাকা ফেরত আনার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আসলে তা নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ ধরনের সুযোগ দেওয়া হয়ে থাকে। কারণ প্রত্যেক দেশেরই কিছু মানুষের বিদেশে বৈধ আয় থাকে, যেগুলো আয়কর রিটার্নে উল্লেখ থাকে না। আবার ওইসব অর্থ করদাতারা বিদেশেও রাখতে চান না। তাঁদের জন্য এ সুযোগ দেওয়া হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই দেখা গেছে এ ধরনের দায়মুক্তির সুযোগ যাঁরা নিয়েছেন, তাঁরা বৈধ আয়ই প্রদর্শন করেছেন। কালো টাকা বা পাচার করা টাকার মালিকরা এর সুবিধা বিশেষ নেননি।
আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, বাজেটে পাচারের টাকা ফেরত আনার সুযোগ দেওয়া নিয়ে পত্রপত্রিকায় অনেক সমালোচনা হয়েছে। সেজন্য এর একটা ব্যাখ্যা দেওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, কেউ যদি বিদেশে টাকা জমা রাখেন বা কোনো বৈধ আয় থাকে, তাহলে সেই টাকা তিনি দেশে আনলে লাভবান হবেন। তাঁদের জন্য এ সুযোগ রাখা হয়েছে। এজন্য তাঁদের কোনো প্রশ্ন করা হবে না। কেউ তাঁর আয়ের উৎস সম্পর্কে জানতে চাইবে না।
এই সুযোগের আওতায় কত টাকা আসতে পারে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগাম কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে এনবিআর ভালো কিছু প্রত্যাশা করছে। এমন সুযোগ দিয়ে পৃথিবীর অনেক দেশ ভালো ফল পেয়েছে। কিন্তু গণমাধ্যমে যেভাবে সমালোচনা হচ্ছে, তাতে অনেকে এগিয়ে আসতে ভয় পাচ্ছেন। এ বিষয়ে ইতিবাচক প্রচারের জন্য গণমাধ্যমের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, গত কয়েক বছর ধরে করহার কমিয়ে দেশীয় শিল্পের বিকাশের চেষ্টা করা হচ্ছে। সরকারের মূল লক্ষ্য দেশীয় শিল্পের বিকাশ। বিশেষ করে দেশে যেসব পণ্যের চাহিদা রয়েছে, সেগুলো যাতে আমদানি করতে না হয়। কারণ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর আমদানি পর্যায়ে শুল্ক্ক কমাতে হবে। বর্তমানে আমদানিতে শূন্য থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক্ক রয়েছে। এ খাতে সর্বোচ্চ শুল্ক্ক ২৫ শতাংশ রাখা যাবে না। আগামী বছরই আমদানি শুল্ক্ক এক শতাংশ হলেও কমাতে হবে। তিনি বলেন, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে এনবিআরের অংশগ্রহণ বাড়ছে। বিদেশ থেকে ঋণ নিয়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড থেকে সরে আসার চেষ্টা রয়েছে। সে অনুযায়ী কাজও হচ্ছে। এ জন্য এনবিআর করের আওতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি চালু করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে তিনি গত ২০২১-২২ অর্থবছরের রাজস্ব সংগ্রহ পরিস্থিতি তুলে ধরেন। এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, গত অর্থবছরে এনবিআর ৩ লাখ এক হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহ করেছে, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৮ দশমিক ৬ শতাংশ কম। তবে লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে থাকলেও কিছুটা শ্নথ অর্থনীতির মধ্যে এ অর্জন খারাপ না। কারণ ২০২০-২১ অর্থবছরের তুলনায় গত অর্থবছরে ১৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আগামীতে রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানোর বিভিন্ন প্রচেষ্টা রয়েছে। করের আওতা বাড়ানো হচ্ছে। ফলে রাজস্ব সংগ্রহ বাড়বে। তিনি বলেন, আগামীতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ যাতে বাড়ে সেজন্য শুল্ককর কমানোসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
মন্তব্য করুন