- অর্থনীতি
- যুক্তরাজ্যের বাণিজ্যনীতির সুফল পাবে বাংলাদেশ
যুক্তরাজ্যের বাণিজ্যনীতির সুফল পাবে বাংলাদেশ
বিশ্নেষক ও রপ্তানিকারকদের মত

২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে বের হবে বাংলাদেশ। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নিয়ম অনুযায়ী এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি পণ্য আমদানিতে শুল্ক্কমুক্ত সুবিধা থাকবে না। এ কারণে এলডিসি থেকে উত্তরণকে রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে অন্যতম প্রধান রপ্তানি বাজার যুক্তরাজ্য ডেভেলপিং কান্ট্রিজ ট্রেডিং স্কিম (ডিসিটিএস) নামের নতুন যে বাণিজ্যনীতি সম্প্রতি ঘোষণা করেছে, তাতে এলডিসি থেকে বের হওয়ার পরও বাংলাদেশের শুল্ক্কমুক্ত সুবিধা থাকবে।
উদ্যোক্তা রপ্তানিকারকরা যুক্তরাজ্যের নতুন বাণিজ্যনীতিকে ইতিবাচক মনে করছেন। বাণিজ্য বিশ্নেষকরা বলছেন, শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধার সঙ্গে রুলস অব অরিজিন বা উৎস বিধির শর্তও শিথিল থাকবে। এ নীতির কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি খাত বড় সুবিধা পাবে। সে দেশে রপ্তানি বাড়াতে সহায়ক হবে। ফলে এলডিসি থেকে বের হওয়ার পরও শতভাগ রপ্তানি সুবিধা কাজে লাগাতে এখনই পরিকল্পনা সাজাতে পারেন রপ্তানিকারকরা।
যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের পণ্যের তৃতীয় আমদানিকারক দেশ। গত অর্থবছরে দেশটিতে রপ্তানি বেশি হয়েছে ২৯ শতাংশ। মোট ৪৮৩ কোটি ডলারের মূল্যের বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ৯ দশমিক ২৭ শতাংশ। তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরে যুক্তরাজ্যে শুধু পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ৪৫০ কোটি ডলার। যুক্তরাজ্যে রপ্তানি হওয়া উল্লেখযোগ্য অন্যান্য পণ্যের মধ্যে হোমটেক্সটাইল ও বাইসাইকেল রয়েছে।
গবেষণা সংস্থা র্যাপিডের চেয়ারম্যান এবং পিআরআইর পরিচালক ড. আব্দুর রাজ্জাক সমকালকে বলেন, যুক্তরাজ্যের নতুন নীতির কারণে দেশটিতে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি আরও উদার এবং সহায়ক হবে। এলডিসি থেকে উত্তরণের পরও এ সুবিধা অব্যাহত থাকবে। ডিসিটিএস অনুযায়ী এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের পর নিম্ন-মধ্যম আয়ের ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বিবেচিত হবে। এর অধীনেই শুল্ক্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) আগামী ২০২৪-৩০ মেয়াদের জন্য শুল্ক্কমুক্ত সুবিধা (জিএসপি) পর্যালোচনায় বাংলাদেশের জন্য এ সুবিধার ওপর বিভিন্ন ধরনের সুরক্ষা পদক্ষেপ নেবে। যুক্তরাজ্যের ডিসিটিএস নীতিতে এ ধরনের কোনো শর্ত নেই। সার্বিকভাবে যুক্তরাজ্যের এ নীতি বাংলাদেশের জন্য অনেক উন্নত বাণিজ্য অগ্রাধিকার কৌশল। এটি এলডিসি-পরবর্তী অবস্থায় ইইউর অগ্রাধিকার তুলনায় অনেক বেশি উন্নয়নবান্ধব।
নিট পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সমকালকে বলেন, যুক্তরাজ্যে শুল্ক্কমুক্ত সুবিধা অব্যাহত রাখার ঘোষণায় তাঁরা অত্যন্ত খুশি। কীভাবে দেশটিতে আরও পোশাক পাঠানো যায়, সেই চেষ্টা তাঁদের অব্যাহত থাকবে। যুক্তরাজ্যের এ ঘোষণা এ দেশে বিনিয়োগে বিদেশি উদ্যোক্তা বিশেষ করে যুক্তরাজ্যের উদ্যোক্তারা আগ্রহী হবেন। ম্যানমেইড ফাইবারে বিনিয়োগের আগ্রহ নিয়ে জাপানের একটি প্রতিনিধি দল গত সপ্তাহে বিকেএমইএ পরিদর্শনে এসেছে। তারা বিনিয়োগ পরিবেশ সহজ করতে সহযোগিতা চেয়েছে। শিগগির হয়তো এ বিষয়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যাবে।
গত বুধবার ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই নতুন স্কিম যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করতে যুক্তরাজ্য সরকারের অঙ্গীকারের প্রতিফলন। ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন বলেন, ডিসিটিএস বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক বিকাশ ও সমৃদ্ধ করতে বাণিজ্য এবং বেসরকারি খাতের শক্তিকে কাজে লাগাবে। নতুন এই স্কিমের অধীনে বাংলাদেশের পণ্য যুক্তরাজ্যের বাজারে আরও সহজ প্রবেশাধিকার পাবে।
মন্তব্য করুন