- অর্থনীতি
- বিদেশিরা বিক্রি করছেন, কিনছেন প্রবাসীরা
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ
বিদেশিরা বিক্রি করছেন, কিনছেন প্রবাসীরা

দ্বিতীয় দফায় ফ্লোর প্রাইস আরোপের পর বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগ প্রত্যাহারের পরিমাণ আগের তুলনায় বেড়েছে। গত আগস্টে বিদেশিদের পোর্টফোলিও অ্যাকাউন্টে যেখানে ৮৬ কোটি টাকার শেয়ার কেনা হয়েছে, সেখানে বিক্রি হয়েছে ৬৬৮ কোটি টাকার শেয়ার। অর্থাৎ গত এক মাসেই বিদেশিরা নিট ৫৮২ কোটি টাকার শেয়ার বেশি বিক্রি করেছেন। জুলাই মাসে নিট বিক্রি ছিল ১৩৯ কোটি টাকা। এ হিসাব শুধু ঢাকার শেয়ারবাজার ডিএসই। চট্টগ্রামের শেয়ারবাজার সিএসইর হিসাব বিবেচনায় নিলে ব্যবধান আরও বেশি হবে।
আগস্টে বিদেশি বিনিয়োগ ব্যাপকভাবে কমলেও এর প্রায় পুরোটা সময় ঊর্ধ্বমুখী ছিল শেয়ারবাজার। প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ৩২৩ পয়েন্ট বেড়েছে। দৈনিক গড় লেনদেন জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে যেখানে ৬৩৪ কোটি টাকা ছিল, আগস্টের শেষ সপ্তাহে তা বেড়ে ১ হাজার ৯০৩ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। দীর্ঘ প্রায় ৯ মাসের টানা দরপতনের পর এমন উত্থানে খুশি ছোট-বড় সব বিনিয়োগকারী। বিশেষত পতন ঠেকাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ফের ফ্লোর প্রাইস আরোপকে স্বাগত জানিয়েছেন তারা। তবে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ফ্লোর প্রাইস নিয়ে অস্বস্তি আছে, যা তাদের বিনিয়োগ প্রত্যাহারের তথ্য থেকে সহজে অনুমান করা যায়।
তবে বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগ বাড়াতে খোদ শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ২০২০ সাল থেকে ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ রোডশো করছে। সংস্থাটির দাবি, বিদেশিদের সাড়া পাচ্ছে, তবে বিনিয়োগ আসতে একটু সময় লাগবে। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, বিদেশিরা ক্রমাগত বিনিয়োগ প্রত্যাহার করছেন। আবার এমন নয় যে, শুধু আগস্টে বিদেশিরা বিনিয়োগ প্রত্যাহার করেছেন। ২০১৬ সাল থেকে তাদের বিনিয়োগ প্রত্যাহারের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, যা গত দুই বছরে বেড়েছে।
বিদেশিরা যে শেয়ার বিক্রি করে নিজ দেশে অর্থ ফিরিয়ে নিচ্ছেন, তা বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যেও প্রমাণ মিলেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে বিদেশি ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিট পোর্টফোলিও বিনিয়োগ প্রত্যাহার হয়েছে ১৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার। ডলারের গড়মূল্য ৮৮ টাকা দরে বিদেশি বিনিয়োগ প্রত্যাহার হয়েছে প্রায় ১৪শ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরে যা ছিল ২৬ কোটি ৯০ ডলার বা প্রায় ২৩শ কোটি টাকা।
তবে বিদেশিরা যখন শেয়ার বিক্রি করে টাকা নিয়ে যাচ্ছেন, তখন প্রবাসীদের পোর্টফোলিও বিনিয়োগ বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবেই ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসীরা নিট ১১ কোটি ৪০ লাখ ডলার বা এক হাজার কোটি টাকা নিট বিনিয়োগ করেছেন। আগের ২০২০-২১ অর্থবছরে যা ছিল ২০ কোটি ৯০ লাখ ডলার বা পৌনে ১৮শ কোটি টাকা। প্রবাসীদের নিট বিনিয়োগের তথ্য যোগ করেই বিদেশি বিনিয়োগের হিসাব করা হয়। এর অর্থ বিদেশিদের নিট বিনিয়োগ প্রত্যাহারের অঙ্ক ২৭ কোটি ডলারের বেশি।
কেনাবেচার পরিসংখ্যান :প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম আট মাসে প্রবাসীসহ বিদেশিরা সর্বমোট তিন হাজার ২০৯ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা করেছেন। এর মধ্যে ৭৯৫ কোটি টাকার শেয়ার কেনেন। বিপরীতে বিক্রি করেন দুই হাজার ৪১৪ কোটি টাকার শেয়ার। কেনার তুলনায় বিক্রি বেশি ১ হাজার ৬১৮ কোটি টাকার শেয়ার। ২০২১ সালে বিদেশিদের পোর্টফোলিও থেকে নিট ৪ হাজার ৯৫০ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি হয়। এর মধ্যে কেনা হয় ২ হাজার ৪১৩ কোটি টাকার শেয়ার। সর্বশেষ ২০ মাসের মধ্যে শুধু গত বছরের ডিসেম্বরে বিক্রির তুলনায় শেয়ার কেনার পরিমাণ বেশি ছিল।
বিদেশিদের হয়ে শেয়ার কেনাবেচা করা ব্রোকারেজ হাউস কর্মকর্তারা জানান, ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান হ্রাস এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক টালমাটাল অবস্থা বিদেশি বিনিয়োগ প্রত্যাহারের বড় কারণ। শুধু বাংলাদেশ নয়, এ কারণে ভারতসহ এশিয়ার প্রায় সব দেশ থেকে বিদেশি বিনিয়োগ প্রত্যাহার হচ্ছে।
শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ আবু আহমেদ মনে করেন, টাকার মান হ্রাস ও অর্থনৈতিক অস্থিশীলতার বাইরে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে সুশাসনের অভাব, অর্থনীতির ধারণার বাইরে গিয়ে ফ্লোর প্রাইস এবং সার্কিট ব্রেকারের ওপর ও নিচের হারে অবাস্তব নিয়মের কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিরক্ত। তার ওপর এখানে কারসাজি হচ্ছে; কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেই। দীর্ঘদিন নতুন ভালো কোনো শেয়ার আসছে না। বছরের পর বছর একই শেয়ার কেনাবেচা করতে গিয়ে বিরক্ত হয়ে বিদেশিরা শেয়ার বিক্রি করে চলে যাচ্ছেন। এর বিপরীতে হয়তো প্রবাসী বাংলাদেশিরা নিজ দেশের টানে হয়তো বিনিয়োগ করছেন।
মন্তব্য করুন