ডলারে অতিরিক্ত মুনাফা করা ৬ ব্যাংক চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত যে মুনাফা করেছে, তার অর্ধেক করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) খাতে ব্যয় করতে হবে। বাকি অর্ধেক আয় খাতে নেওয়া যাবে।

এ শর্তে বিদেশি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, বেসরকারি খাতের ব্র্যাক, দ্য সিটি, সাউথইস্ট, ডাচ্‌-বাংলা ও প্রাইম ব্যাংকের এমডি এবং ট্রেজারি বিভাগের প্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৃহস্পতিবার ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়।

জানা গেছে, জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত তথ্যের ভিত্তিতে এসব বিষয়ে প্রথমে ব্যাংকগুলোর কাছে ব্যাখ্যা চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে সন্তোষজনক জবাব না পেয়ে গত ৮ আগস্ট ৬টি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে মানবসম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করতে বলা হয়।

এরপর গত ১৭ আগস্ট এসব ব্যাংকের এমডির বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না- জানতে চেয়ে নোটিশ দেওয়া হয়। ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৪৬ ধারায় এ নোটিশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ধারায় ব্যাংকের এমডিদের অপসারণ করতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক। একইসঙ্গে জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ডলার থেকে অর্জিত মুনাফা আয় খাতে না নিয়ে আলাদা একটি হিসাবে সংরক্ষণ করতে বলা হয়।

জানা গেছে, ব্যাংকগুলোর এমডি বলেছেন, ডলারের বিপরীতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মুনাফা করার বিষয়টি ঠিক হয়নি। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ ধরনের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদন জানানো হয়। আর আগামীতে তাঁরা এ ক্ষেত্রে সতর্ক থাকবেন বলেও জানানো হয়।

এর পর দুই ধাপে আরও ৭টি ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ রকম পরিস্থিতিতে পুরো ব্যাংকিং খাতে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়। আন্তর্জাতিকভাবেও বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের মুখে পড়েছে বাংলাদেশের ব্যাংক খাত। এতে বিদেশি ব্যাংকের ক্রেডিটলাইন পাওয়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রথম ৬ ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগ থেমে থাকেনি। পরবর্তী সময়ে গত ৭ সেপ্টেম্বর একই কারণে আরও ৬টি ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা তলব করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিদেশি মালিকানার এইচএসবিসি, বেসরকারি খাতের এনসিসি, মার্কেন্টাইল, ব্যাংক এশিয়া, ইউসিবি ও ঢাকা ব্যাংকের এমডিকে চিঠি দিয়ে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়।

এর আগে ২৪ আগস্ট ইস্টার্ন ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন এসব ব্যাংকের বিরুদ্ধেও একই রকম ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।

ব্যাংকাররা জানান, চাহিদার তুলনায় সরবরাহে টান পড়ায় ডলার বাজারে অস্থিরতা চলছে। আমদানি দায় কমিয়ে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বাড়াতে পারলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। অবশ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যস্থতায় গত ১২ সেপ্টেম্বর ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্সে সর্বোচ্চ ১০৮ টাকা এবং রপ্তানি বিল নগদায়নে ৯৯ টাকা দর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর আমদানি বিল নিষ্পত্তি হবে এই দুয়ের গড় দরের সঙ্গে ১ টাকা যোগ করে। একই সঙ্গে ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এভাবে ডলার বিক্রির ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যাপক কমে বুধবার ৩৬ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। ২০২০ সালের জুলাইয়ের পর এটা সর্বনিম্ন। এর আগে গত বছরের আগস্টে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে।