
আন্তর্জাতিক ও দেশের বাজারে অনেক পণ্যের দর বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বেসরকারি খাতের ঋণে। এ সময়ে আশানুরূপ নতুন বিনিয়োগ না হলেও বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। গত আগস্ট শেষে প্রবৃদ্ধি উঠেছে ১৪ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশে। বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ২০১৮ সালের নভেম্বর তথা ৪৫ মাস পর আবার ১৪ শতাংশের ঘর ছাড়াল। গত জুলাই শেষে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন কমিয়ে ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ করেছে। গত অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে যা ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ ছিল। তবে গত জুন পর্যন্ত ঋণ বেড়েছিল ১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরেও একই প্রাক্কলনের বিপরীতে ঋণ বেড়েছিল মাত্র ৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
মূলত সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আশানুরূপ ঋণ প্রবৃদ্ধি না হওয়ায় চলতি মুদ্রানীতিতে প্রাক্কলন কমানো হয়। যদিও গত কয়েক মাসে বিভিন্ন পণ্যের দর বাড়ার প্রভাবে এরই মধ্যে ঋণ প্রাক্কলিত প্রবৃদ্ধি ছুঁয়েছে। ঋণ বৃদ্ধির বর্তমানের এ ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থবছর শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্যের চেয়ে প্রবৃদ্ধি অনেক বেশি হবে। তাতে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ আরও বাড়বে।
সংশ্নিষ্টরা জানান, করোনা-পরবর্তী বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধির মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে খাদ্য, জ্বালানিসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম অনেক বেড়েছে। ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পর্যায়ে দৈনন্দিন খরচ মেটাতে এখন ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন অনেকে। এ সময়ে কেউ যেন সমস্যায় না পড়েন সে জন্য গত এপ্রিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে চলতি মূলধন খাতে বিদ্যমান ঋণসীমা বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তীকালীনের জন্য এ নির্দেশনা কার্যকর হবে। অবশ্য একই সঙ্গে আমদানি দায় কমাতে কিছু পণ্য আমদানিতে ৭৫ থেকে শতভাগ এলসি মার্জিন নির্ধারণ করে তাতে ঋণ দেওয়া বন্ধ করা হয়েছে। এ সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকার বিপরীতে ডলার কিনছে ব্যাংকগুলো। ফলে অনেক ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার পাশাপাশি টাকার টানাটানিতে রয়েছে।
ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন সমকালকে বলেন, এ সময়ে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রধান কারণ আমদানি পর্যায়ে পণ্যের দর ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেড়েছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকের ঋণসীমা বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে এই ঋণ বাড়ার কারণে পুরো ব্যাংক খাত তারল্য সংকটে পড়েছে তেমনটি নয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত আগস্ট শেষে বেসরকারি খাতে ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা। গত বছরের আগস্ট শেষে যা ছিল ১১ লাখ ৯৪ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। এর মানে এক বছরে ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৮৭ কোটি টাকা বা ১৪ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। গত জুলাই শেষে ঋণস্থিতি ছিল ১৩ লাখ ৫২ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, নতুন বিনিয়োগের জন্য ঋণ বাড়ছে খুব কম। এর মানে বর্তমানের এ ঋণ প্রবৃদ্ধি নতুন কর্মসংস্থান তৈরিতে তেমন প্রভাব ফেলছে না। এ প্রবণতা বেশি দিন চলতে থাকলে মূল্যস্ফীতির চাপ আরও বাড়বে। তিনি জানান, পণ্যমূল্য বৃদ্ধির দোহাই দিয়ে একটা শ্রেণি ঋণ পরিশোধের সুযোগ থাকলেও ঋণসীমা বাড়িয়ে নিয়েছে। তারা আর ব্যাংকের টাকা ফেরত দিচ্ছে না। ফলে টাকার হাতবদল কমেছে। একই সঙ্গে ব্যাংক খাতের ঋণস্থিতিও বাড়ছে।
মন্তব্য করুন