- অর্থনীতি
- জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমাল বিশ্বব্যাংক
জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমাল বিশ্বব্যাংক

ফাইল ছবি
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছর বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কিছুটা কমিয়ে এনেছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির নতুন এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই অর্থবছর জিডিপি ৬ দশমিক ১ শতাংশ হারে বাড়তে পারে। এটি সংস্থার আগের পূর্বাভাসের চেয়ে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ কম। এর আগে গত জুন মাসে চলতি অর্থবছরের জন্য ৬ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক।
দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বৃহস্পতিবার 'কোপিং উইথ শকস :মাইগ্রেশন অ্যান্ড দ্য রোড টু রেজিলিয়েন্স' শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তর থেকে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
বিশ্বব্যাংকের প্রবৃদ্ধির নতুন পূর্বাভাসে দেখা যায়, একমাত্র ভারত ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি বেশি হতে পারে। সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছর ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। এটি বিশ্বব্যাংকের আগের পূর্বাভাসের চেয়ে দশমিক শূন্য্য ১ শতাংশ কম। তবে দক্ষিণ এশিয়ার গড় প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস আগের মতোই ৫ দশমিক ৮ শতাংশে রাখা হয়েছে।
প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে প্রশ্নোত্তর পর্বে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজার বলেন, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত কমছে। মুদ্রার বিনিময় হারেও অস্থিরতা চলছে। এ দুই বিষয় খুব ভালোভাবে ব্যবস্থাপনা করতে হবে। রপ্তানি নেতিবচাক ধারায় নেমে আসাকেও বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য বড় আঘাত মনে করেন তিনি।
রেইজার বলেন, ইউরোপ এবং আমেরিকার বাজারে খাদ্যপণ্যে উচ্চ মূল্যস্ম্ফীতির কারণে বাংলাদেশের পোশাকের রপ্তানি কমছে। অবশ্য বৈশ্বিক সংকট এবং খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ম্ফীতির কারণে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশও একই সমস্যার মধ্যে রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন সংস্থার দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ হ্যানস টাইমার। প্রতিবেদনে এ অঞ্চলের দেশগুলোর প্রসঙ্গে বলা হয়, আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়া, পুঁজি পাচার এবং রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার কারণে লেনদেনে ভারসাম্য সংকট তৈরি হচ্ছে। কমছে রিজার্ভ। চাপ সামলাতে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ চেয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে মূল্যস্ম্ফীতিকে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য বড় হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ প্রসঙ্গে এতে বলা হয়, গত জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত গ্রামীণ এলাকায় খাদ্যপণ্য, পানীয় ও তামাক পণ্যে মূল্যস্ম্ফীতি ৮ দশমিক ৯ শতাংশে পৌঁছেছে। উচ্চ মূল্যস্ম্ফীতি অন্যান্য সেবা এবং পণ্যের বাজারেও চাপ তৈরি করেছে। বেড়ে চলা মূল্যস্ম্ফীতি অর্থনীতিতে ক্ষত তৈরি করছে। একই অবস্থা দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোতেও। বিশ্ববাজারে খাদ্য ও জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়া এবং বাণিজ্য-সংক্রান্ত নানা বাধা দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের মূল্যস্ম্ফীতির ওপর প্রভাব ফেলছে। চলতি বছর এ অঞ্চলের মূল্যস্ম্ফীতি ৯ দশমিক ২ শতাংশে পৌঁছতে পারে। এতে মানুষের প্রকৃত আয় কমে যেতে পারে। দরিদ্র মানুষের ওপর যার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে। কারণ তারা তাদের আয়ের বড় অংশ খাবারের পেছনে খরচ করে।
এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, সারাবিশ্বই এখন মূল্যস্ম্ফীতির চাপে রয়েছে। খুব শিগগির এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের সম্ভাবনা নেই বলেও মনে করেন তিনি।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২১ সালেই বাংলাদেশের রেমিট্যান্স করোনা-পূর্ব অবস্থায় ফিরে আসে। অনেক দিন ধরে ওই অবস্থার মধ্যেই ছিল পরিস্থিতি। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রবাসী আয়ের গতি কিছুটা ধীর হয়ে আসে। এতে চলতি হিসাবে বড় ধরনের ঘাটতি তৈরি হয়। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মধ্যে পাকিস্তানেও একই পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে।
মন্তব্য করুন