চলমান জ্বালানি সংকটে তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রপ্তানি খাতে বিপর্যয় এড়াতে বিশেষ ব্যবস্থায় পোশাক শিল্পকারখানায় চাহিদামতো নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ।

রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ ভবনে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকটে পোশাক শিল্প দু'ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। বিদ্যুতের অভাবে কারখানায় ডিজেল দিয়ে জেনারেটর চালাতে হচ্ছে। এতে অস্বাভাবিক ব্যয় বাড়ছে। আবার দীর্ঘ সময় ধরে চালু থাকার কারণে জেনারেটর বিকল হচ্ছে। এতে পোশাক উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। ক্ষতির বর্ণনা তুলে ধরে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, 'সরকারের কাছে আমাদের একান্ত অনুরোধ, রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানায় বিশেষ ব্যবস্থায় চাহিদা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ করা হোক।'
ফারুক হাসান বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অস্থিরতা এবং উচ্চ মূল্যস্ম্ফীতির কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং যুক্তরাষ্ট্র্রের মতো প্রধান প্রধান বাজারে পোশাকের চাহিদা কমছে। এ কারণে গত দুই মাস ধরে রপ্তানি আদেশ কমছে উদ্বেগজনক হারে। গত সেপ্টেম্বরে পোশাক রপ্তানি কমেছে ৬ শতাংশের মতো। তাঁর শঙ্কা, চলতি অক্টোবরে রপ্তানি আরও বেশি হারে কমতে পারে। অথচ চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত পোশাক রপ্তানি টানা বেড়েছিল। এ বাস্তবতায় চলতি অর্থবছর শেষে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সম্ভাবনা কম।
পোশাক খাতে অন্যান্য সংকট এবং উদ্বেগের তথ্য জানিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পোশাক খাতে উৎসে কর বর্তমান ১ শতাংশ হার থেকে কমিয়ে গত অর্থবছরের হারে পুনর্নির্ধারণের অনুরোধ জানান। গত অর্থবছরে তৈরি পোশাকসহ সব ধরনের পণ্যের রপ্তানি মূল্যের ওপর শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ নির্ধারিত ছিল। অর্থাৎ প্রতি ১০০ টাকা রপ্তানি মূল্যের বিপরীতে ৫০ পয়সা উৎসে কর কাটা হতো। আয়কর অধ্যাদেশে এ হার ১ শতাংশ ধার্য রয়েছে। বাজেট পেশের পর এসআরও জারির মাধ্যমে তা বিভিন্ন হারে কমানো হয়েছে বিগত বছরগুলোতে। কিন্তু এ বছর এখনও এ-সংক্রান্ত কোনো এসআরও জারি করা হয়নি। উৎসে কর ১ শতাংশ কেটে রাখা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনের আগে বিজিএমইএর 'সেন্টার ফর ইনোভেশন, ইফিসিয়েন্সি অ্যান্ড ওএসএইচ' উদ্বোধন করা হয়। পোশাক খাতের দক্ষতা উন্নয়ন, টেকসই রূপকল্প বাস্তবায়ন ও প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে এ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। শিল্পের বর্তমান সংকট এবং আগামীর চ্যালেঞ্জ শনাক্ত করার পাশাপাশি মোকাবিলায় কাজ করবে এই কেন্দ্র।
সংবাদ সম্মেলনে রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণে বিভিন্ন দেশে সফর এবং কূটনৈতিক প্রচেষ্টার উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন বিজিএমইএ সভাপতি। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদ উল্লাহ আজিম, খন্দকার রফিকুল ইসলাম, পরিচালক নীলা হোসনা আরা, ব্যারিস্টার ভিদিয়া আম্রিত খান, খসরু চৌধুরী প্রমুখ।