সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল) যাত্রা শুরু করে ১৯৯৫ সালের ২২ নভেম্বর। ২৭ বছর পেরিয়ে ২৮ বছরে পা রাখছে ব্যাংকটি। শরিয়াহভিত্তিক এ ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাফর আলম বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ওবায়দুল্লাহ রনি

সমকাল: এসআইবিএল প্রতিষ্ঠার ২৭ বছর পূর্ণ করল। এ সময়ে আপনাদের অর্জন নিয়ে কিছু বলুন।

জাফর আলম: কল্যাণমুখী ব্যাংকিং ধারার প্রবর্তন এবং প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক ব্যাংকিং সেবা দেশের মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে কাজ করছে এসআইবিএল। শুরু থেকেই নতুনত্ব ও আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে সেবা দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে সারাদেশে ১৭৯টি শাখা, ১৪৫টি উপশাখা, ৩০৮টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট এবং ১৯৬টি এটিএম বুথের মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্যাংকটিকে ৭টি জোনে ভাগ করা হয়েছে। সেবার মান বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন সেবাপণ্য যুক্ত করা হয়েছে। এতে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গত বছরের তুলনায় ব্যাংকের আমানত ৮ দশমিক ১৮ শতাংশ বেড়ে ৩৬ হাজার ১৪২ কোটি টাকা হয়েছে। বিনিয়োগ ১০ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা। আদায় কার্যক্রম জোরদারের ফলে খেলাপি ঋণ আগের ৫ দশমিক ৩০ শতাংশ থেকে কমে ৪ দশমিক ৮৯ শতাংশে নেমেছে। গত ৬ মাসে বৈদেশিক বাণিজ্য বেড়েছে ৪২ দশমিক ৬১ শতাংশ।

সমকাল: নতুন কিছু বিনিয়োগ ও আমানত স্কিম চালু করেছে এসআইবিএল। এসব স্কিমে সাড়া কেমন?

জাফর আলম: মানুষের মৌলিক বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে ২০২২ সালের শুরুতে এসআইবিএল শিক্ষা, এসআইবিএল চিকিৎসা এবং এসআইবিএল বিবাহ সঞ্চয় স্কিম নামে অনন্য বৈশিষ্টের তিনটি আমানত পণ্য চালু করা হয়েছে। এসব স্কিমে একজন যে পরিমাণ অর্থ জমা করবেন, তার দ্বিগুণ বিনিয়োগ নিতে পারবেন। এতে বেশ সাড়া পাচ্ছে ব্যাংক। খুব শিগগিরই তুলনামূলক বেশি মুনাফা এবং সুযোগ-সুবিধা দিয়ে প্রবাসী আমানত প্রকল্প, অবসরপ্রাপ্ত নাগরিক মাসিক সুবিধা স্কিম, হকার্স ডিপোজিট অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন স্কিম এবং মুদারাবা ঐচ্ছিক ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট নামে চারটি নতুন আমানত পণ্য চালু করা হবে।

সমকাল: ব্যাংকে না এসে সেবা নিতে গ্রাহকদের জন্য আপনাদের কী ধরনের উদ্যোগ রয়েছে?

জাফর আলম: ব্যাংকে না এসে সেবার জন্য 'এসআইবিএল নাউ' নামে মোবাইল অ্যাপ চালু করা হয়েছে। এ অ্যাপ ব্যবহার করে ঘরে বসেই গ্রাহকরা এখন ই-অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। কিউআর কোড দিয়ে চেকবই বা ডেবিট কার্ড ছাড়াই শাখায় গিয়ে টাকা উত্তোলন করতে পারছেন। শুধু দেশে নয়; এই অ্যাপের মাধ্যমে বিদেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা মোবাইল থেকেই ই-অ্যাকাউন্ট খুলতে পারছেন। জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্টসহ কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বর্তমানে ৩৪টি দেশ থেকে অ্যাকাউন্ট খোলা যাচ্ছে। পর্যায়ক্রমে আরও দেশ এ তালিকায় যুক্ত হবে। অ্যাকাউন্টধারীকে ডুয়াল কারেন্সি ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে। যা দিয়ে দেশ-বিদেশে সব জায়গায় কেনাকাটা, টাকা উত্তোলন ও অনলাইন ট্রানজেকশন করা যায়। এ সেবার ফলে দেশে বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে। এসআইবিএল নাউ অ্যাপ থেকে মোবাইল রিচার্জ থেকে শুরু করে আমানত ও বিনিয়োগ হিসাবের কিস্তি জমা, তহবিল স্থানান্তর, ইউটিলিটি ও ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ, কিউআর কোড দিয়ে টাকা উত্তোলন, বিকাশ ও নগদে তহবিল স্থানান্তর ইত্যাদি সেবা উপভোগ করতে পারছেন গ্রাহক। চালু করা হয়েছে ২৪ ঘণ্টার একটি পূর্ণাঙ্গ কল সেন্টার।

সমকাল: চলমান বৈদেশিক মুদ্রার সংকট সমাধানের সহজ উপায় বলা হচ্ছে বৈধ পথে রেমিট্যান্স বাড়ানো। এ ক্ষেত্রে আপনাদের আর কোনো বিশেষ উদ্যোগ রয়েছে কি?

জাফর আলম: বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ফলে এসআইবিএলে এলসি খুলতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। রেমিট্যান্স আরও বাড়াতে প্রথম বাংলাদেশি ব্যাংক হিসেবে এসআইবিএল মানি গ্রামের সঙ্গে এপিআই-এ যুক্ত হয়েছে। যার মাধ্যমে গ্রাহকের পাঠানো রেমিট্যান্স সরাসরি তার অ্যাকাউন্ট ও ওয়ালেটে জমা হয়। দেশের প্রথম ব্যাংক হিসেবে 'সুইফট গো সিস্টেম' বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এ পদ্ধতির ফলে সুইফট থেকে ১ লাখ ইউরো প্রণোদনা পেয়েছে এসআইবিএল। এসআইবিএল ইনস্ট্রা ফ্যামিলি রেমিট, ইনস্ট্রা এডু এবং ইনস্ট্রা মেডি রেমিট নামে তিনটি আউটবাউন্ড রেমিট্যান্স সেবার মাধ্যমে বাংলাদেশি নাগরিক বিদেশে অধ্যয়নের জন্য অথবা চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বাইরে পাঠানোর সুযোগ পাচ্ছেন। বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিকরা তাঁদের উপার্জিত অর্থ বৈধ উপায়ে পাঠাতে পারছেন। ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমে মিনিটেই রেমিট্যান্স পাঠানোর এ সেবা উদ্ভাবনের জন্য সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক 'বেস্ট ইনোভেশন- ফাইন্যান্স ইনোভেশন ইন ব্যাংকস' ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড-২০২২ পেয়েছে। ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পরিচালিত আওকাফ প্রপার্টিজ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের মালিকানায় যুক্ত হয়েছে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। এর ফলে ব্যাংকের মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি ব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। সম্প্রতি স্পেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমানে ৩টি নতুন এক্সচেঞ্জ হাউসের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। ওমান, সংযুক্ত আমিরাত ও সিঙ্গাপুরে আরও ৫টি এক্সচেঞ্জ হাউসের সঙ্গে চুক্তি হতে যাচ্ছে।