- অর্থনীতি
- পরিচালন বাজেটের সর্বোচ্চ ব্যয় সুদ পরিশোধে
পরিচালন বাজেটের সর্বোচ্চ ব্যয় সুদ পরিশোধে

বাজেটের আকার বড় হচ্ছে। বাড়ছে সরকারের ব্যয়। কিন্তু ব্যয় অনুযায়ী আয় হচ্ছে না। ফলে বাড়ছে বাজেট ঘাটতি। এ ঘাটতি মেটাতে নিতে হচ্ছে ঋণ। এতে প্রতি বছরই ঋণ বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে ঋণের সুদ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত হিসাবে গত অর্থবছরে (২০২১-২২) দেশি-বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে সরকারের পরিচালন বজেটের সর্বাধিক ২৩ শতাংশ ব্যয় হয়েছে। এরপর রয়েছে জনপ্রশাসন। এ খাতে ব্যয় হয়েছে পরিচালন ব্যয়ের ২১ শতাংশ।
২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়। তবে সংশোধিত বাজেট কমিয়ে ৫ লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা করা হয়। বাজেটকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় বা পরিচালন বাজেটকে বলে রাজস্ব বাজেট। অন্য অংশ উন্নয়ন বাজেট, যার প্রধান অংশ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপি।
উন্নয়ন বাজেটে গত অর্থবছর বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ২৬ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা। আর ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা ছিল পরিচালন ব্যয়। এর মধ্যে ২৩ শতাংশ অর্থাৎ ৭০ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা সুদ পরিশোধে, যা পরিচালন ব্যয়ের ১৪টি খাতের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০২১-২২ অর্থবছরের মূল বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৬৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। ২১ শতাংশ ব্যয় করে পরিচালন বাজেটের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খাত হচ্ছে জনপ্রশাসন।
এ খাতে ব্যয় হয়েছে ৬৩ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা। যদিও মূল বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৯৭ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা। পরিচালন বাজেটের ১৪ শতাংশ ব্যয় করে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে শিক্ষা। বছর শেষে এ খাতে ব্যয় হয়েছে ৪৩ হাজার কোটি ৭৯০ লাখ টাকা। ৮ শতাংশ ব্যয় হয়েছে প্রতিরক্ষা খাতে। সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণে ব্যয় হয়েছে ৮ শতাংশ। ৭ শতাংশ ব্যয় করেছে কৃষিতে। স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় হয়েছে পরিচালন বাজটের ৪ শতাংশ।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ৮০ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে সুদ পরিশোধে; যা চলতি বাজেটের পরিচালন ব্যয়ে একক খাত হিসেবে সর্বোচ্চ ১৯ দশমিক ২ শতাংশ। গত অর্থবছরের মূল বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৬৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। এ হিসেবে এক বছরে ঋণের সুদব্যয় খাতে বরাদ্দ বেড়েছে ১১ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা। গত ৬ বছরে সুদ পরিশোধে ব্যয় বেড়েছে ১৪৩ শতাংশ।
বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, সরকারের রাজস্ব ব্যয় বাড়ছে। কিন্তু যে হারে ব্যয় বাড়ছে, সে হারে আয় বাড়ছে না। এতে বাজেট ঘাটতি বাড়ছে। আর বাজেট ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংক খাতের ওপর নির্ভরশীলতাও বাড়ছে। উচ্চ সুদে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার পাশাপাশি ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেওয়ায় প্রতি বছরই বাড়ছে সুদব্যয়। এটি অব্যাহত থাকলে আগামীতে সংকুচিত হয়ে যাবে উন্নয়ন বাজেট। তাই সুদ পরিশোধের ব্যয় কমিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
এ প্রসঙ্গে গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর এ নিয়ে সমকালকে বলেন, সুদ পরিশোধে ব্যয় মারাত্মক গতি বাড়ছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য আশনিসংকেত। আগামীতে এ খাতে ব্যয় আরও বাড়বে, কারণ বিশ্বজুড়ে সুদহার বেড়েছে। তাই সরকারকে ঋণ নেওয়া কমাতে হবে। বিশেষ করে অভ্যন্তরীণভাবে যে ঋণ নেওয়া হয় তাতে উচ্চ সুদ পরিশোধ করতে হয়। বাজেটের অর্থ সংস্থানের জন্য রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণের সুপারিশ করেন তিনি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, রাজস্ব আহরণ কম হওয়ায় সরকারকে বেশি পরিমাণে ঋণ গ্রহণ করতে হচ্ছে। তাই ক্রমান্বয়ে সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে সুদহার কম হওয়ায়। সরকার ২০২৪-২৫ অর্থবছর নাগাদ বৈদেশিক ঋণের অংশ ৪৫ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বর্তমানে যা ৩৭ শতাংশের মতো। একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ ঋণ ৫৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে।
মন্তব্য করুন