ব্যক্তিনির্ভর ব্যবসায় আরোপ হতে পারে উৎসে কর

.
মেসবাহুল হক
প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ২৩:২৫ | আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ১১:৫৭
উৎসে কর সম্প্রসারণের মাধ্যমে ব্যক্তিনির্ভর ব্যবসা থেকে রাজস্ব বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর। এর অংশ হিসেবে ব্যবসায় ৩ কোটি টাকার বেশি টার্নওভার বা বিক্রি করেন এমন ব্যক্তি করদাতাকে উৎসে করের আওতায় আনা হতে পারে। আগামী অর্থবছরে অর্থ আইনের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ করের আওতা বাড়ানোর বিষয়ে সম্প্রতি এনবিআরের এক বৈঠকে আলোচনা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন এনবিআরের সদস্য (করনীতি) একেএম বদিউল আলম।
বৈঠকে একটি কর অঞ্চলের প্রতিনিধি ব্যবসা ক্ষেত্রে বার্ষিক ৩ কোটি টাকার বেশি লেনদেনকারী ব্যক্তি করদাতাকে অর্থ আইন, ২০২৩-এর ধারা ১৪০-এর উপধারা (৩)-এ নির্দিষ্ট ব্যক্তির সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করে উৎসে কর কর্তনের আওতায় আনার প্রস্তাব করেন। প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে তিনি বলেন, অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থনীতিকে করের আওতায় আনার ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় পদ্ধতি হচ্ছে উৎসে কর কর্তনের বিধান। বাংলাদেশেও করের আওতা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে উৎসে কর কর্তন বাড়াতে হবে। ব্যবসার ক্ষেত্রে ৩ কোটি টাকার বেশি টার্নওভারবিশিষ্ট স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতাকে উৎসে কর কর্তনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্দিষ্ট ব্যক্তির সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা এ ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।
বৈঠকে জানানো হয়, বর্তমান আইনে টার্নওভার নির্বিশেষে যে কোনো কোম্পানি, ফার্ম, ব্যক্তিসংঘ বা তহবিল উৎসে কর কর্তনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্দিষ্ট ব্যক্তি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হলেও স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতার টার্নওভার যাই হোক না কেন, তাকে উৎসে কর কর্তন করতে হয় না। এর ফলে অনেক সময় ফার্ম বা ব্যক্তিসংঘ উৎসে কর কর্তন থেকে দায়মুক্তি পেতে ফার্ম বা ব্যক্তিসংঘের টার্নওভারকে তার সদস্যদের টার্নওভার হিসেবে প্রদর্শন করে। এ জাতীয় কর্মকাণ্ড নিরুৎসাহিত করে করের আওতা সম্প্রসারণে ব্যবসায় ক্ষেত্রে ৩ কোটি টাকার বেশি টার্নওভারবিশিষ্ট স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতাকে উৎসে কর কর্তনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্দিষ্ট ব্যক্তির সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।
মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২-এর বিধান অনুযায়ীও কোনো স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতার বার্ষিক টার্নওভার ৩ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেলে তাঁকে স্বাভাবিক নিয়মে ভ্যাট সংগ্রহ ও পরিশোধ করার বাধ্যবাধকতায় আসতে হয়। একইভাবে ৩ কোটি টাকার বেশি লেনদেনকারী ব্যবসায়ীকেও উৎসে করের আওতায় এনে রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।
উৎসে কর এক ধরনের অগ্রিম কর। আয় অর্জন পর্যায়েই অগ্রিম হিসেবে এ কর আদায় করা হয়। অগ্রিম কর বছরের শেষে আয়কর রিটার্নের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়। অগ্রিম কর বেশি দিলে ফেরত (রিফান্ড) পাওয়া যায়। আর কম দিলে পাওনা অংশ রিটার্ন জমার সঙ্গে পরিশোধ করতে হয়। শুধু বাংলাদেশে নয়, অনেক দেশেই উৎসে কর পদ্ধতি চালু রয়েছে। তবে বাংলাদেশে উৎসে কর পদ্ধতি অত্যন্ত জটিল এবং আদায় প্রক্রিয়া অস্বচ্ছ। আবার বেশি কাটা হলেও বর্তমান বাস্তবতায় বছর শেষে সমন্বয়ের ক্ষেত্রে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাই ব্যবসায়ীরা এ ধরনের কর দিতে আগ্রহী হন না।
এ প্রসঙ্গে এসএমএসি অ্যাডভাইজরি সার্ভিসেসের পরিচালক স্নেহাশীষ বড়ুয়া সমকালকে বলেন, এ ধরনের করের আওতায় আনা হলে প্রতিষ্ঠানের ভাড়াসহ কর্মচারীর বেতন সবকিছুর বিপরীতেই উৎসে কর দিতে হবে। বর্তমানে অনেক ছোট ছোট ব্যবসায়ীর বছরে লেনদেন ৩ কোটি টাকা হয়। তাদের পক্ষে এত খুঁটিনাটি হিসাব রাখা কঠিন। তাই ৩ কোটি নয়, বরং আরও বেশি লেনদেনের ক্ষেত্রে এটি বাস্তবায়ন করে পরে ধীরে ধীরে কমিয়ে কয়েক বছর পর ৩ কোটি টাকাতেও আনতে পারে সরকার। শুরুতেই ৩ কোটি টাকার লেনদেনে এটি কার্যকর করা হলে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা সমস্যায় পড়তে পারেন।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, উৎসে কর থেকে প্রত্যক্ষ বা আয়কর খাতে বড় একটি অংশ আদায় হয়। বর্তমানে মোট আয়করের ৬০ শতাংশই আসে উৎসে কর থেকে। ঠিকাদার ব্যবসায়ী, মেয়াদি আমানত, সঞ্চয়পত্র বিনিয়োগে অর্জিত মুনাফা, সম্পত্তি রেজিস্ট্রেশন, ট্রাভেল এজেন্টসহ বিভিন্ন খাত থেকে প্রযোজ্য হারে উৎসে কর আদায় হয়।