- অর্থনীতি
- ভারত থেকে পণ্য আমদানিতে কোটার প্রস্তাব সংশোধন হচ্ছে
ভারত থেকে পণ্য আমদানিতে কোটার প্রস্তাব সংশোধন হচ্ছে
পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন

চাল, গম, চিনি, পেঁয়াজ, রসুন ও আদা- ছয়টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশকে বার্ষিক কোটা দিতে প্রাথমিকভাবে সম্মত ভারত। তবে বাংলাদেশের প্রাথমিক প্রস্তাবে চাল, গম ও চিনির পরিমাণ বেশি হওয়ায় তা যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার সুপারিশ ছিল ভারতের। এ অবস্থায় কোটার প্রস্তাব সংশোধনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে সরকার। কমিটি আগামী ১০ কর্মদিবসে এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেবে। এরপর তা চূড়ান্ত করে আগামী মাসেই আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠাবে বাংলাদেশ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
গত ২২ ও ২৩ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যমন্ত্রী পর্যায়ের সভায় বাংলাদেশ খাদ্যপণ্য সরবরাহের অনিশ্চয়তার কারণে চাল, গম, চিনি, পেঁয়াজ, রসুন, আদা ও মসুর ডাল- এই সাতটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে আলাদা কোটা চাওয়া হয়। সভায় বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পিয়ুশ গয়াল নিজ নিজ দেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। ডাল বাদে ছয়টি পণ্যে কোটা দিতে রাজি হয় ভারত।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর ৪৫ লাখ টন গম, ২০ লাখ টন চাল, ৭ লাখ টন পেঁয়াজ, ১৫ লাখ টন চিনি, ১ দশমিক ২৫ লাখ টন আদা, ৩০ হাজার টন মসুর ডাল ও ১০ হাজার টন রসুনের কোটা চেয়েছিল বাংলাদেশ। তবে ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রতিবছর ৪৫ লাখ টন গম আমদানি করে না বাংলাদেশ। বাংলাদেশে রপ্তানির জন্য ৪৫ লাখ টন গম রাখা হলে যদি শেষ পর্যন্ত আমদানি না করে, তাহলে ভারতের কৃষক ও ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। যে পরিমাণ কোটা রাখা হবে, তার পুরোটাই আমদানির নিশ্চয়তা চায় দেশটি।
ভারত থেকে কোটার ভিত্তিতে পণ্য আমদানির যৌক্তিক পরিমাণ নির্ধারণে গতকাল মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে সভাপতি করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে পররাষ্ট্র, কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের প্রতিনিধি রাখা হয়েছে। কমিটিকে গত ১০ বছরে এসব পণ্যের উৎপাদন, চাহিদা ও আমদানির তথ্য বিশ্নেষণ করে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে আমদানির যৌক্তিক পরিমাণ নির্ধারণ করে একটি প্রতিবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে বলা হয়েছে।
জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ সমকালকে বলেন, 'রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ভারত থেকে হঠাৎ করে চাল, গম ও চিনি আমদানি বেড়ে গেছে। সে অনুযায়ী এসব পণের পরিমাণ উল্লেখ করে কোটা চাওয়া হয়। কিন্তু ভারত সরকার বলেছে, শুধু এক বছর নয়, অন্তত ১০ বছরের আমদানি তথ্য বিশ্নেষণ করে এসব পণ্যের পরিমাণ পুনর্নির্ধারণ করে প্রস্তাব পাঠাতে হবে। তাই এ কাজ করার জন্য একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। কমিটি সব তথ্য বিশ্নেষণ করে একটি প্রতিবেদন দেবে।
তিনি আরও বলেন, 'আমরা সাধারণভাবে একটি পরিমাণ নির্ধারণ করে প্রস্তাব ভারতে পাঠাব। তবে ওই পরিমাণ থেকে অন্তত ১০ শতাংশ কম বা বেশি আমদানি হতে পারে বলে তাদের জানাব। কারণ, এসব পণ্য আমদানি করবে বেসরকারি খাত। তাই নির্দিষ্ট করে পরিমাণ নির্ধারণ খুব কঠিন।'
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কিছুদিন আগে ভারত পেঁয়াজ ও গম রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় সমস্যায় পড়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু নিত্যপণ্য আমদানিতে বার্ষিক কোটা দিলে সামগ্রিকভাবে কোনো পণ্যের রপ্তানি বন্ধ করলে বাংলাদেশ তার আওতায় থাকবে না। ভুটান ও মালদ্বীপকে এ সুবিধা দিয়ে আসছে ভারত।
মন্তব্য করুন