চাচাতো ভাইয়ের ছোড়া এসিডে ঝলসে গিয়েছিল কলেজছাত্রী ফেরদৌসি সুমাইয়া ও তাঁর ছোট ভাই মোহাম্মদ আলী। পটুয়াখালী সদর উপজেলার মাদারবুনিয়া ইউনিয়নের গেরাখালী গ্রামে ২০২১ সালের ৩ আগস্ট ঘটে এ ঘটনা। এতে ১২ বছর বয়সী মোহাম্মদের আঘাত সামান্য হলেও সুমাইয়ার মুখ ঝলসে যায়। এক পর্যায়ে ১৮ বছর বয়সী মেয়েটিকে গত বছরের শেষ দিকে চিকিৎসার জন্য ভারতের তামিলনাড়ূ রাজ্যের ভেলরে নিয়ে যান তাঁর বাবা-মা। সুমাইয়াও স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল সুস্থ হয়ে আবার আগের জীবনে ফেরার। কিন্তু সঙ্গে থাকা অর্থ শেষ হয়ে যাওয়ায় এক সময় মেয়েকে ভেলরের সিএমসি হাসপাতালে ভর্তি রেখে দেশে ফিরে আসেন তাঁর মা-বাবা। এর পর আর তাঁরা মেয়ের খোঁজ রাখেননি। ফলে বর্তমানে অর্থাভাবে ভেলরে বন্ধ হয়ে গেছে সুমাইয়ার চিকিৎসা। প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনতে না পারায় প্রচণ্ডভাবে ফুলে গেছে তাঁর মুখ।

তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার সাইদুল ইসলামের হোয়াটস অ্যাপ নম্বরে একটি ভিডিও বার্তা পাঠিয়েছেন সুমাইয়া। বাঁচানোর আকুতি জানিয়ে বার্তায় সুমাইয়া কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার বাবা-মা আমাকে ফেলে বাড়ি চলে গেছেন। আমি টাকার অভাবে ওষুধ কিনতে পারছি না। গত বৃহস্পতিবার পুলিশ সুপার সাইদুল ইসলাম বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার অডিও কলে সুমাইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সিএমসি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মেয়েটি জানায়, এসিডদগ্ধ হওয়ার পর বাবা-মা আমাকে ভেলরে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যান। কিন্তু টাকা শেষ হয়ে যাওয়ায় প্রথমে বাবা দেশের বাড়িতে চলে যান। গত ২-৩ দিন আগে মাও চলে গেছেন। এখন আমি ভেলরে একা আছি। অর্থের অভাবে ওষুধ কিনে খেতে না পারায় আমার মুখ ফুলে উঠেছে। প্রচণ্ড যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছি। মূলত, আমি চাচাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে কথা বলায় বাবা আমার ওপর ক্ষুব্ধ। ভাতিজাকে বাঁচানোর জন্য বাবা আমাকে দেশে নিতে চাইছেন না। ভালোভাবে চিকিৎসাও করাচ্ছেন না। আমাকে নিয়ে বাবা ১০০ বার সালিশ বৈঠকে বসেছেন। এতে আমি নানাভাবে প্রতারিত ও নির্যাতিত হয়েছি। বাবার কারণে আমার মামলাও এখন ভেস্তে হওয়ার পথে। তাঁর কারণে আসামিরা সবাই জামিন পেয়েছে। সবার কাছে আকুতি, আপনারা চিকিৎসা খরচের জোগান দিয়ে আমাকে বাঁচান। আমি আর এসিডে পোড়া যন্ত্রণা সহ্য করতে পারছি না।
জানা গেছে, ২০২১ সালে যখন সুমাইয়া এসিডদগ্ধ হন, তখন তিনি এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। বর্তমানে তিনি পটুয়াখালী সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। এসিড হামলার ঘটনার পর সুমাইয়ার খালা রেবেকা বেগম ২০২১ সালের ২৮ আগস্ট পটুয়াখালী সদর থানায় মামলা করেন। এতে সুমাইয়ার চাচাতো ভাই এনায়েত গাজীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৪-৫ জনকে আসামি করা হয়। পরবর্তী সময়ে তদন্ত শেষে পুলিশ গত বছরের ১৫ অক্টোবর এনায়েত গাজী, তার ভাই রাসেল গাজী ও রাসেলের স্ত্রী মারিয়া বেগমের নামে আদালতে চার্জশিট জমা দেয়। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে সুমাইয়ার বাবা রাজা মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, আমার মেয়ে ভেলরে চিকিৎসাধীন। ওর চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে আমি আগেই দেশে চলে এসেছি। ২-৩ দিন হয় সুমাইয়ার মাও চলে এসেছে। টাকা জোগাড় হলেই আমরা আবার ভেলরে যাব। এ ছাড়া আমার ভিসার মেয়াদ শেষ। ভিসার মেয়াদ বাড়াতে হবে। আমার বিরুদ্ধে মেয়ে যেসব অভিযোগ করেছে, তা ঠিক নয়। বাবা হয়ে আমি এ কাজ করতে পারি না।
পুলিশ সুপার সাইদুল ইসলাম বলেন, এসিড নিক্ষেপের মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন। মানবিক দিক বিবেচনায় ভারতে একা থাকা মেয়েটির পাশে সবার দাঁড়ানো উচিত। পটুয়াখালী পুলিশ প্রশাসন থেকে মেয়েটিকে চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা করা হবে।