কয়েকদিন ধরে শেয়ারবাজারে রটেছে, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিনিয়োগ সংস্থা আইসিবির ঋণসহ এমন কিছু সুবিধা পেতে যাচ্ছে, যার কারণে শেয়ারবাজারে নতুন করে ৬ থেকে ৭ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়বে। কেউ কেউ আগ বাড়িয়ে বলছেন, এ জন্য আইনও করা হচ্ছে। বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যানের সাক্ষাৎ বিষয়ে কিছু গণমাধ্যম এমন খবর প্রকাশ করেছে। গত কয়েক দিনে শেয়ারদর, সূচক ও লেনদেন বৃদ্ধির নেপথ্যে খবরটির বড় ভূমিকা আছে।

গতকাল এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল হোসেন সমকালকে জানান, আইসিবি ৬ বা ৭ হাজার কোটি টাকা পেতে যাচ্ছে মর্মে বিভিন্ন খবর নানা গণমাধ্যম সূত্রে জেনেছেন। যার সবটাই 'বিভ্রান্তিকর' বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, কেউ কেউ 'ডিপোজিটরি ফান্ড' উল্লেখ করে কী সব খবর যেন লিখছে। এই ডিপোজিটরি ফান্ড কী, তা নিজেই বুঝতে পারছেন না। এমন ফান্ডের কথা আগে কখনও শোনেননি।

এ বিষয়ে জানতে গতকাল সন্ধ্যায় বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে ফোন করা হলে তিনি সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিমের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। মুখপাত্র সমকালকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সম্প্রতি বিএসইসি চেয়ারম্যানের সাক্ষাৎকালে শেয়ারবাজার উন্নয়নে নানা ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে অর্থনীতির সঙ্গে শেয়ারবাজার সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে বড় করার জন্য নতুন বিনিয়োগ পণ্যের প্রচলন করার বিষয়ে আলোচনা হয়। সরকারপ্রধানের কাছে এ জন্য নীতিগত সহায়তাও চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আইসিবিতে রাখা সোনালী, অগ্রণীসহ বিভিন্ন ব্যাংকের আমানতকে 'শেয়ারবাজার এক্সপোজার' হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করা হয়েছে, আইসিবিকে দেওয়া এ আমানত যাতে এক্সপোজার হিসেবে গণ্য করা না হয়। এতে করে আইসিবির ৭ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়বে।

আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সমকালকে আরও বলেন, এখন আইসিবিকে দেওয়া আমানত সংশ্নিষ্ট ব্যাংকের শেয়ারবাজার এক্সপোজার বা বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হয়। এক্সপোজার থেকে এ আমানত বাদ দেওয়া হলে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ সহজ হবে। তবে এর কারণে সুনির্দিষ্ট ৬ বা ৭ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ সক্ষমতা বৃদ্ধির ধারণা কী করে এলো, তা বোধগম্য নয়। আইসিবি যতটা ঋণ নেবে, ততটাই হবে। তা ৫০০ কোটিও হতে পারে, আবার হাজার কোটিও হতে পারে। এ বিষয়ে বিএসইসির মুখপাত্রের কাছে ব্যাখ্যা চাইলে তিনি সমকালকে বলেন, পরে জেনে আলাপ করবেন।

আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, প্রায় এক মাস আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের (এফআইডি) কাছে ৫ হাজার কোটি টাকার অর্থায়ন সহায়তা চেয়ে তিনি চিঠি দেন। এর বাইরে গত রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ১ হাজার কোটি টাকা চেয়েছেন। সরকার বা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে টাকা পাওয়ার কোনো আশ্বাস এখনও পাননি। সরকারের কোন ফান্ড থেকে এবং কী হিসেবে অর্থ চেয়েছেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সরকার কোন ফান্ড থেকে কোন প্রক্রিয়ায় দেবে বা আদৌ টাকা দিতে পারবে কিনা, তা আমি জানি না।

গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক বিষয়ে তিনি বলেন, গত রোববার গভর্নরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ১ হাজার কোটি টাকার ডিমান্ড লোনের বাইরে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছ থেকে আইসিবি যে মেয়াদি আমানত নেয়, সেই আমানতকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সীমার (এক্সপোজার) বাইরে রাখা যায় কিনা, সে অনুরোধ করেছেন। গভর্নর বলেছেন, আইনের মধ্যে থেকে যতটুকু সম্ভব নীতিগত সহায়তা দেবেন।

এদিকে সরকার আইসিবিকে কোনো অর্থায়ন করছে কিনা, জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব দেশে নেই। তাঁর দেশে ফেরার আগে কিছু বলা সম্ভব নয়। অন্য এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ২০১০ সালের ধসের পরও ৫ হাজার কোটি টাকা সরকার দেয়নি। এর ওপর বর্তমানে অর্থনৈতিক সংকটের কারণে কৃচ্ছ্রতা নীতি অনুসরণ করছে সরকার।

আইসিবির ৬ বা ৭ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ সক্ষমতা বিষয়ক খবরের বিষয়ে জানতে চাইলে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সংগঠন বিএমবিএর সভাপতি ছায়েদুর রহমান সমকালকে বলেন, 'গণমাধ্যম সূত্রেই এ খবর জেনেছি। এর কতটা সত্য- বলতে পারব না।' আইসিবির ডিপোজিটরি ফান্ডের বিষয়ে শুনেছেন কিনা- এমন প্রশ্নে বিএমবিএর সভাপতি বলেন, 'এটাও গণমাধ্যমের কিছু খবরে দেখেছি। ডিপোজিটরি ফান্ড বলে কিছু আছে বলে আমার জানা নেই।'