- অর্থনীতি
- সুদহার, ডলার বাজারভিত্তিক না হলে আরেকটি ধাক্কা
সুদহার, ডলার বাজারভিত্তিক না হলে আরেকটি ধাক্কা
মুদ্রানীতির ওপর আইসিএবির আলোচনায় আহসান মনসুর

ব্যাংকের ঋণের সুদের হার এবং টাকা-ডলার বিনিময় হার সত্যিকার অর্থে বাজারভিত্তিক না হলে অর্থনীতিতে আরেকটি ধাক্কা অপেক্ষা করছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ক্রমাগত কমছে। এখন রিজার্ভ ২৪ বিলিয়ন ডলারের মতো (আইএমএফের হিসাবে)। প্রতি মাসে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি বাজারে বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এভাবে চলতে থাকলে কয়েক মাস পর রিজার্ভ ১০ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসবে। এ অবস্থা হতে দিলে মারাত্মক পরিণতি হবে। সম্প্রতি ঘোষিত মুদ্রানীতির ওপর এক আলোচনায় পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর এমন মত দিয়েছেন।
ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) রোববার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আইসিএবি ভবনে মুদ্রানীতির ওপর গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন আইসিএবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শুভাশীষ বসু। আইসিএবি সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান আলোচনার সূচনা করেন। সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাবেক সভাপতি হুমায়ুন কবির।
প্রধান আলোচক হিসেবে আহসান মনসুর বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির সংকটের কারণ হিসেবে শুধু ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বিশ্ব বাজারকে দায়ী করলে হবে না। এখানে অর্থনীতি ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা রয়েছে। ভারত মোটামুটি ভালো ব্যবস্থাপনা করতে পেরেছে। বাংলাদেশ বৈশ্বিক পরিবর্তনের সঙ্গে নীতি সমন্বয় করেনি। বিনিময় হার দীর্ঘদিন ধরে আটকে রেখেছে। এক পর্যায়ে আর আটকে রাখা যায়নি। ফলে ডলারের বিপরীতে টাকার হঠাৎ বড় ধরনের পতন ঘটেছে। তিনি উল্লেখ করেন, বিনিময় হারের পতনের কারণে বেসরকারি খাতের ঋণগ্রহীতাদের এক বছরে অন্তত ৬৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের এখানে সুদের হার নির্ধারিত। বিনিময় হার এক প্রকার নির্ধারিত। বাফেদা দর ঠিক করে। শেয়ারবাজারেও ফ্লোর প্রাইস আরোপ করা হয়েছে। এর মানে বাজার অর্থনীতি কাজ করছে না। ফ্লোর প্রাইস আরোপ ভুল সিদ্ধান্ত। এভাবে জুজুর ভয়ে দর আটকে রাখার পরিণতি কখনও ভালো হয় না। তিনি উল্লেখ করেন, গত অর্থবছরে দেশের আর্থিক হিসাবে ১৪ বিলিয়ন ডলার উদ্বৃত্ত ছিল। চলতি অর্থবছরে ওই হিসাবে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তাহলে বিনিয়োগকারীরা কেন এখানে আসবে। ফ্লোর প্রাইস থাকলে তাদের জন্য 'এক্সিট পলিসি' কী হবে।
তাঁর মতে, এখন মূল সংকট তিনটি- মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট এবং তারল্য সংকট। ডলার সংকট গুরুতর আকার ধারণ করেছে। এখন অর্থনীতির সংকট মানে ডলার সংকট। একে ছোট করে দেখার কিছু নেই। আরও প্রকট হলে মারাত্মক পরিস্থিতি তৈরি হবে। ডলার সংকটের কারণে আমদানি কম হচ্ছে, কিছু পণ্যে বাড়তি কর কিংবা বিধিনিষেধের কারণে নয়। ডলার থাকলে বিধিনিষেধের মধ্যেও আমদানি বাড়ত। এ ছাড়া অনেকে আগামীর দায় মেটানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদি ঋণ আছে ১৭ বিলিয়ন ডলার। এর পরিশোধের মেয়াদ কতদিনই বা বাড়ানো যাবে। ফলে এগুলো পরিশোধের চাপ সামনে আসছে। তিনি মনে করেন, বাজারের হাতে বিনিময় হার ছেড়ে দিলে তা একটু বেড়ে একটা জায়গায় মোটমুটি স্থিতিশীল হবে। আর নিয়ন্ত্রণ রাখলে, আটকে রাখলে হঠাৎ চাপ তৈরি করে বেশি আকারে বেড়ে যাবে। তাঁর মতে, বিনিময় হারের সমস্যা টাকা তারল্যকেও জটিল করেছে। সবাই ডলার কিনে রাখতে চাচ্ছে। টাকাকে আকর্ষণীয় করতে না পারলে পরিণতি খারাপ হবে।
তিনি বলেন, এখনকার সংকটের মূল কারণ অর্থ পাচার, যা বড় আকার ধারণ করেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। অর্থ চলে যাচ্ছে। সামনে নির্বাচন। এ বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। বিনিময় হার, সুদের হার আটকে রাখা যাবে না। রক্তক্ষরণ হচ্ছে। ব্যান্ডএইড লাগালে হবে না। সার্জারি করে ব্যান্ডেজ করতে হবে।
আরও বক্তব্য দেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ, বিল্ডের সিইও ফেরদৌস আরা বেগম, ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রেপায়েত উল্লাহ মৃধা, সমকালের বিজনেস এডিটর জাকির হোসেন প্রমুখ। মাহবুব আহমেদ বলেন, মূল্যস্ম্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে দেশজ উৎপাদন বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে। ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ সরকারের সব নীতির মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেন।
মন্তব্য করুন