চিনির দাম গত পাঁচ মাসে মোট চারবার বাড়ানো হয়েছে। এর পরও নিত্যপণ্যটির সরবরাহ বাড়েনি বাজারে। আগের মতোই প্যাকেটজাত চিনির সরবরাহ খুবই কম। এদিকে সর্বশেষ ঘোষিত দাম আগামীকাল বুধবার থেকে কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও এরই মধ্যে পাইকারি বাজারে খোলা চিনির দাম বেড়েছে বলে জানান খুচরা ব্যবসায়ীরা। তাঁদের দাবি, রমজান মাসকে সামনে রেখে কোম্পানিগুলো চিনির সরবরাহ বাড়াতে গড়িমসি করছে। অন্যদিকে, চিনি পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বরাবরের মতোই বলছে, ঋণপত্র বা এলসি খোলাসংক্রান্ত সমস্যা থাকায় আমদানি কম। এ সমস্যার সমাধান না হলে সামনের দিনগুলোতে সরবরাহ বাড়বে কিনা, তা বলা যাচ্ছে না।

গত পাঁচ মাসে মোট চারবার চিনির দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ গত ২৬ জানুয়ারি চিনির কেজিতে পাঁচ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেয় চিনি পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বুধবার থেকে খুচরা পর্যায়ে খোলা চিনির কেজি ১০৭ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনি ১১২ টাকায় বিক্রি হবে।

গতকাল সোমবার রাজধানীর বনানী, হাতিরপুল, কারওয়ান বাজার ও তেজকুনীপাড়া এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সব দোকানে এখনও প্যাকেটজাত চিনির সংকট রয়েছে। কিছু দোকানে খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বিক্রেতারা প্রতি কেজির দাম রাখছেন ১১০ থেকে ১২০ টাকা। এর মধ্যে বড় বাজারগুলোতে ১১০ থেকে ১১৫ টাকায় পাওয়া গেলেও মহল্লার দোকানে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, এক বছর আগে চিনির কেজি ছিল ৭৫ থেকে ৭৮ টাকা। সেই হিসাবে, এক বছরে দাম বেড়েছে ৩৫ থেকে ৪২ টাকা। অর্থাৎ ৫০ শতাংশের বেশি।

বনানী ডিএনসিসি কাঁচাবাজারের রায়হান জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী ইশাবুল আলম সমকালকে বলেন, 'বাড়তি দরের চিনি এখনও বাজারে আসেনি। খোলা চিনি ১০৭ থেকে ১০৮ টাকা দরে কিনতে হয় আমাদের। বিক্রি করতে হয় ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়। বাজারে যদি সব কোম্পানি সমানতালে চিনি দিত, তাহলে সংকট থাকত না। এখন কেউ দেয়, কেউ দেয় না।'

কারওয়ান বাজারের ইউসুফ জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. ইউসুফ বলেন, কোম্পানি আর ডিলারদের মধ্যেই যত সমস্যা। তারা সরবরাহ ঠিক রাখলে বাজারে এতে সমস্যা হতো না। দাম যা-ই হোক, চিনিই তো দিচ্ছে না তারা। একই বাজারের হাবিব জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. হাবিব বলেন, পাইকারি পর্যায়ে এরই মধ্যে চিনির বস্তায় ১৫০ থেকে ২০০ টাকা দাম বেড়েছে।

হাতিরপুল কাঁচাবাজারের জাকির জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী জাকির হোসেন বলেন, চিনির দাম বাড়িয়ে লাভ কী? চিনিই তো নেই। দেবে দেবে বলেও দিচ্ছে না। তেজকুনীপাড়া মায়ের দোয়া স্টোরের একজন বিক্রয়কর্মী বলেন, একটি কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি এ পর্যন্ত ছয়-সাতবার ক্রয়াদেশ নিয়ে গেছেন। কিন্তু একবারও চিনি দেননি। পাইকারি বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে খোলা চিনির কেজি ১২০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।

চিনি পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক এস এম মুজিবুর রহমান বলেন, 'আমরা ১ ফেব্রুয়ারি থেকে নতুন বর্ধিত দামের চিনি বাজারে ছাড়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। তবে এখন পর্যন্ত বাজারে আমাদের আগের দামের চিনি রয়েছে। খোলা চিনির দাম পাইকারি পর্যায়ে কেউ বেশি নিচ্ছে কিনা, জানি না।'

নতুন দামের চিনি বাজারে ছাড়ার পর সংকট নিরসন হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখেছি, চট্টগ্রামে চিনিভর্তি জাহাজ ভাসছে। খালাস হচ্ছে না এলসিসংক্রান্ত সমস্যায়। তাই সংকট কাটবে কী, কাটবে না- সে বিষয়ে আমি বলতে পারছি না।'

বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব গোলাম রহমান বলেন, সরকার পরিশোধনকারীদের দামের বিষয়ে যে নির্দশনা দেয়, তাঁরা সেটিই মেনে নেন। কিন্তু ঘোষিত দাম কার্যকরের আগেই কেউ বেশি দাম নিচ্ছে কিনা, সেটি দেখভালের দায়িত্ব সরকারের। তবে কোনো কোম্পানি এখনই বাড়তি দরের চিনি বাজারে ছেড়েছে বলে মনে হয় না।

বাজারে চিনির সরবরাহ বাড়বে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মূল কথা হলো এলসি (ঋণপত্র)। ব্যাংক যদি এলসি খোলে, তাহলে চিনি আমদানি করা যাবে। তখন বাজারেও সংকট থাকবে না। কিন্তু এলসি না হলে পরিশোধনকারী চিনি সরবরাহ করবে কীভাবে।