আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ফ্যাক্টরিং পদ্ধতিতে উচ্চ ব্যয় হচ্ছে। বাংলাদেশে ফ্যাক্টরিংকে জনপ্রিয় করতে ব্যয় কমাতে হবে। ব্যাংকের মতো শক্তিশালী কোনো পক্ষ উপস্থিত না থাকায় লেনদেনে যেসব ঝুঁকি রয়েছে আলোচনার মাধ্যমে নিরসন করতে হবে। রোববার ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি আয়োজিত এক আলোচনায় বক্তারা এমন অভিমত দেন।

রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে 'অপারেশন অব ওপেন অ্যাকাউন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাক্টরিং ফর ফরেন ট্রেড অব বাংলাদেশ' শীর্ষক এ আলোচনার আয়োজন করা হয়। এর আগে সকাল থেকে বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদিরে নিয়ে কর্মশালার আয়োজন করা হয়। কর্মশালায় ৩১টি ব্যাংকের ৯৬ এবং ২৪টি কোম্পানির ৩২ কর্মকর্তা অংশ নেন। কর্মশালা শেষে তাদের মাঝে সার্টিফিকেট বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠন সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ও আইসিসি বাংলাদেশের ব্যাংকিং বিষয়ক কমিশনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ এ. (রুমি) আলী।
ওপেন অ্যাকাউন্ট হলো-কোনো ধরনের এলসি ছাড়াই আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভিত্তিতে বাকিতে পণ্য কেনা বেচা। অন্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও এখানে কোনো পর্যায়ে ব্যাংকের উপস্থিতির প্রয়োজন হয় না। অন্য দিকে তৃতীয় একটি পক্ষ বিল কিনে নেওয়াকে বলে ফ্যাক্টরিং। ফ্যাক্টরিংয়ের ক্ষেত্রে এক দেশে পণ্য রপ্তানি হলেও আরেক দেশ থেকে রপ্তানি মূল্য দেশে আসতে পারে। তবে যে প্রতিষ্ঠান ফ্যাক্টরিং করে তারা আগাম অর্থায়নে একটি চার্জ নেয়। আবার ওই প্রতিষ্ঠানটি ঝুঁকি বিবেচনায় কোনো না কোনো বিমা কোম্পানিতে বীমা করা থাকে। ঝুঁকি প্রিমিয়ামের টাকাও গ্রাহক থেকে নেওয়ার কারণ খরচ বেড়ে যায়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ফ্যাক্টরিংয়ের চাহিদা বিবেচনায় একটি নীতিমালা ঠিক করা হয়েছে। এেিক আরও সময়োপযোগি করার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
আইসিসি বাংলাদেশের সহ-সভাপতি এবং এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি এ. কে. আজাদ বলেন, ফ্যাক্টরিংয়ের চার্জ অনেক উচ্চ। বর্তমানে ফ্যাক্টরিং করতে ২ শতাংশের মতো খরচ হয়। এতো উচ্চ ব্যয়ে ব্যবসা খরচ অনেক বেশি। এমনিতেই ইউটিলি বিল বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। তবে ক্রেতারা পণ্যের দর সেভাবে বাড়ায়নি।

মুহাম্মদ এ. (রুমি) আলী বলেন, বাংলাদেশে ফ্যাক্টরিং এখনও খুব সীমিত আকারে হয়। উচ্চ ব্যয় এবং ব্যবস্থাপনায় ঝুঁকির কারণে অনেকে তাতে আগ্রহী হয় না। আবার ব্যাংকের উপস্থিতি না থাকায় মানি লন্ডারিংয়ের ঝুঁকি আছে। ফলে এমন একটি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে যাতে করে সব পক্ষ আগ্রহী হয়। অর্থনীতির মেরুদন্ড ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ফ্যাক্টরিংয়ের প্রয়োজনীয়তা বেশি। তাদের বিষয়ে ভাবতে হবে।

বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, অর্থায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এসএমই খাত সব সময় অগ্রাধিকারের বাইরে থাকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সহায়তার মাধ্যমে রপ্তানি ফ্যাক্টরিং সহজ করেছে।

বিকেএমএইর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, উচ্চ সুদহার এবং তৃতীয় দেশের মাধ্যমে বিল আনতে গিয়ে সমস্যা হয়। একটি ঘটনা তুলে ধরে বলেন, সম্প্রতি তৃতীয় একটি দেশ থেকে রপ্তানি বিল আনতে গিয়ে নানা সমস্যা দেখা দেয়। বিষয়টি নিয়ে তিনি ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনার পর একটি ব্যাংক অর্থ ছাড় করলেও আরেকটি ব্যাংক করেনি।

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ফিকি সভাপতি নাসের এজাজ বিজয় বলেন, ওপেন অ্যাকাউন্ট পদ্ধতিতে বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকি আছে। বিশেষ করে মূল্য যথাসময়ে পাওয়া, উচ্চ সুদ এবং বীমা প্রিমিয়ামের ঝুঁকি রয়েছে। ফ্যাক্টর চেইন ইন্টারন্যাশনালের (এফসিআই) মহাসচিব পিটার মুত্রয় বলেন, আগামী দিনের বৈশ্বিক লেনদেনের বড় সম্ভাবনা ফ্যাক্টরিং। তাদের মাধ্যমে ফ্যাক্টরিংয়ের ৭০ শতাংশই এসএমই খাতের। ঝুঁকিমুক্ত লেনদেনের জন্য তারা কাজ করছেন।

বিআইবিএমের অধ্যাপক প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জী বলেন, বীমা প্রিমিয়াম এবং আগাম অর্থায়নের কারণে এখানে উচ্চ ব্যয় আছে। সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান করে সামনের দিকে এগোতে হবে। ইস্টার্ন ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ শাহীন বলেন, প্রতিযোগিতা বাড়লে তখন খরচ কমবে।

এফসিআইর মার্কেটিং কমিটির চেয়ারম্যান সারাহ সি.এইচ পন বলেন, ফ্যাক্টরিং পদ্ধতি বৈশ্বিকভাবে একটি বড় সুযোগ হয়ে দেখা দিয়েছে।

সমপনী বক্তব্যে এফসিসিআইর মহাসচিব আতাউর রহমান সবাইকে ধন্যবাদ জানান।