ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির মোট ১৪ জন গ্রাহক অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে এসএসএল কমার্সের কাছে আটকে থাকা এক লাখ ৪৫ হাজার ৬৬৭ টাকার বেশি ফেরত পেয়েছেন। গত শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) প্রতিষ্ঠানটি এ টাকা ফেরত দিয়েছে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

এছাড়াও ধাপে ধাপে বিকাশ, নগদ ও এসএসএলে আটকে থাকা টাকাগুলো গ্রাহকদের ফেরতে দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। ইভ্যালি গ্রাহকদের নগদে প্রায় ১৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, বিকাশে চার কোটি ৯১ লাখ টাকা এবং এসএসএল কমার্সে তিন কোটি ৪০ লাখ টাকা আটকে আছে। অন্যান্য পেমেন্ট গেটওয়েতে কিছু টাকা আটকে রয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে নগদে আটকে থাকা দেড় কোটি টাকা ফেরত দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

২০২২ সালের নভেম্বর মাসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ই-কমার্স সেল ইভ্যালিকে ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে তার গ্রাহকদের সংখ্যা এবং পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে থাকা অর্থের পরিমাণ সম্পর্কে তথ্য জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি সে নির্দেশনা মানতে ব্যর্থ হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২৭টি অনলাইন শপিং প্ল্যাটফর্মে গ্রাহকদের আটকে থাকা অর্থের পরিমাণ প্রায় ৫২৫ কোটি টাকার মতো। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৪টি কোম্পানি ৪৯ হাজার ১৯০ গ্রাহককে আটকে থাকা টাকার প্রায় ৩৫২ কোটি ফেরত দিয়েছে।

হাইকোর্টের আদেশের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ইভ্যালি তার কার্যক্রম পুনরায় শুরু করে। এটি পরিচালনার জন্য পাঁচ সদস্যের নতুন একটি পরিচালনা পর্ষদও গঠন করা হয়। নতুন বোর্ডে ইভ্যালির সাবেক চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন, শামীমার মা ফরিদা তালুকদার লিলি এবং তার বোনের স্বামী মামুনুর রশীদ রয়েছেন।

বাংলাদেশে আমাজন ও আলিবাবার মতো প্ল্যাটফর্ম তৈরির স্বপ্নের কথা বলে ২০১৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর যাত্রা শুরু করে ইভ্যালি। অধিক গ্রাহক আকর্ষণ করতে অস্বাভাবিক ডিসকাউন্ট দিয়ে অগ্রিম অর্থ নিয়ে পণ্য সরবরাহ করত ইভ্যালি।

শুরুতেই গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে ইভ্যালির সিইও মোহাম্মদ রাসেল চালু করেন ক্যাশব্যাক অফার। এ অফারের আওতায় পণ্যভেদে ১০ শতাংশ থেকে শুরু করে ৩০০ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাশব্যাক পেতেন গ্রাহকরা। টাকা ক্যাশব্যাকের এমন আকর্ষণীয় অফারে প্রলুব্ধ হয়ে প্রচুর পরিমাণে গ্রাহক ইভ্যালি থেকে কেনাকাটা শুরু করেন। এরপর ‘সাইক্লোন’ নামে আরেকটি অফারের মাধ্যমে বিশাল ছাড়ের ঘোষণা দেন রাসেল। সেখানেও পণ্যভেদে ১০ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়ের ঘোষণা দেওয়া হতো।

এক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটি পণ্যের ডেলিভারি নিয়ে টালবাহানা শুরু করে। ৪৫ দিনের মধ্যে এসব পণ্য ডেলিভারি করার কথা থাকলেও, তা কখনো কখনো তিন মাস এমনকি ছয় মাসও ছাড়িয়ে যেতে শুরু করে। অর্থনীতি শাস্ত্রে ‘পঞ্জি স্কিম’ নামে প্রতারণার যে ফাঁদের কথা বলা হয়, সেটিই অনুসরণ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। নতুন গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া টাকা দিয়ে পুরনো গ্রাহক ও মার্চেন্টদের টাকা পরিশোধ শুরু করে ই-কমার্স কোম্পানিটি। তারপর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রচেষ্টায় ইভ্যালির কেলেঙ্কারি ধরা পরে। ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির এক গ্রাহক জালিয়াতি ও আত্মসাতের অভিযোগে মোহাম্মদ রাসেল ও তার স্ত্রী ইভ্যালির তৎকালীন চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা দায়ের করেন।

মামলার পরদিন রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার বাসা থেকে রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। রাসেল এখনো কারাগারে থাকলেও জামিনে বের হয়ে শামীমা পুনরায় ইভ্যালির চেয়ারম্যান হয়েছেন।