আর্থিক খাতে জলবায়ু-সম্পর্কিত ঝুঁকি মূল্যায়নে একটি জুতসই ফ্রেমওয়ার্ক বা ‘কাঠামো’ তৈরিতে সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) একটি স্টাফ মিশন আজ রোববার পাঁচ দিনের সফরে ঢাকায় আসছে। সম্প্রতি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসানের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে সংস্থাটির মনিটারি অ্যান্ড ক্যাপিটাল মার্কেট (এমসিএম) বিভাগ ৫ থেকে ৯ মার্চ তাদের একটি মিশনের বাংলাদেশ সফরের কথা জানিয়েছে।

আইএমএফ বলেছে, নদী ও উপকূলীয় জলোচ্ছ্বাস সংক্রান্ত উচ্চ জলবায়ু ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। যার প্রভাব পড়বে আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতায়। সংস্থাটির এমসিএম বিভাগের অর্থনীতিবিদ এজেন্স ক্যারেলার নেতৃত্বে মিশনটি বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থ মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করবে। এসব বৈঠকে আর্থিক ও জলবায়ু তথ্য শনাক্তকরণ, ঝুঁকি মূল্যায়ন কাঠামো তৈরি করা, আর্থিক খাতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাবসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে।

কৃষি, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন, পানিসম্পদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ– এসব মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোতে যেসব জলবায়ু বিশেষজ্ঞ রয়েছেন, তাঁদের এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞদের মধ্যে সহযোগিতা ও তথ্য আদান-প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সহায়তা করবে মিশনটি।

আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে গত ৩০ জানুয়ারি। ঋণের প্রথম কিস্তি ৪৭ কোটি ডলার ২ ফেব্রুয়ারি ছাড় করা হয়েছে। ৪৭০ কোটি ডলারের মধ্যে এক্সটেনডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ) বা বর্ধিত ঋণ সুবিধা ও এক্সটেনডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি (ইএএফএফ) বা বর্ধিত তহবিল সুবিধার আওতায় ৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন বা ৩৩০ কোটি মার্কিন ডলার।  নতুন গঠিত তহবিল রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) আওতায় আরও ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন বা ১৪০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করেছে আইএমএফ। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশই প্রথম এশিয়ান দেশ হিসেবে আরএসএফের আওতায় ঋণ পাচ্ছে। আইএমএফ বলছে, আর্থিক খাতের জন্য জলবায়ু ঝুঁকির মূল্যায়ন আরএসএফের আওতায় সংস্কার হিসেবেই বিবেচিত।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আরএসএফ তহবিলের ঋণ পেতে সরকারকে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় আগামী অর্থবছরের বাজেটে বেশ কিছু কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে।  বর্তমানে জলবায়ু-সম্পর্কিত বার্ষিক সরকারি ব্যয়ের পরিমাণ জিডিপির ১ শতাংশেরও কম। কিন্তু আগামী ১৫ বছরে এ খাতে ব্যয় ৩ থেকে ৪ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের বেশ বড় অর্থায়ন প্রয়োজন বলে মনে করছে আইএমএফ।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট আগামী জুনে জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী। এ বাজেট প্রণয়নের কাজ ইতোমধ্যে শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। বাজেটের জন্য নিজেদের পরামর্শ দিতে আগামী এপ্রিল মাসে আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দলেরও ঢাকায় আসার কথা রয়েছে।