পরীক্ষা ১০০ নম্বরের। নিহালের নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে ৮৯ দশমিক ৫ নম্বর। যদিও পরীক্ষা শেষে আশা ছিল ৯২ নম্বর পাবেন। সারাদেশে ১ লাখ ৩৯ হাজার ২১৭ পরীক্ষার্থীর মধ্যে তাঁর অবস্থান দ্বিতীয়। প্রকৌশল বিষয়ের পাশাপাশি মেডিকেল কলেজে ভর্তির প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তিনি। তাতেই বাজিমাত। মায়ের স্বপ্ন পূরণের পথে হাঁটা শুরু হবে তাঁর। নিউরোসার্জন হওয়ার স্বপ্ন নিহালের।

নিহালের বেড়ে ওঠা ময়মনসিংহ নগরীর কৃষ্টপুর দৌলতমুন্সি রোডের বাসায়। তাঁর পুরো নাম আসিফ রহমান নিহাল। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার প্রকাশিত ফলে সারাদেশে দ্বিতীয় হয়েছেন তিনি। ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজে। নিহালের বাবা মিজানুর রহমান সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। মা আফরোজা বেগম ময়মনসিংহের ফুলপুর মহিলা কামিল মাদ্রাসার জীববিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক। নেহালের পৈতৃক ভিটা নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার আগিয়া ইউনিয়নের আগিয়া গ্রামে।


নিহালের পাঠের শুরু ফুলপুরের একটি স্কুলে। পরে সেখান থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হন ময়মনসিংহ নগরীর গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে জিলা স্কুলে। জিলা স্কুল থেকে এসএসসি শেষ করে আনন্দ মোহন কলেজ থেকে শেষ করেন এইচএসসি। প্রতিটি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ অর্জন করেন নিহাল।


নিহালের চাচা ওয়াহিদুর রহমান ছোটন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের নিউরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। তাঁকে দেখিয়ে ছেলেবেলা থেকেই নিহালকে ডাক্তার হওয়ার প্রেরণা দিতেন তাঁর মা। তিনি বলেন, ‘ ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল নিহাল ডাক্তার হবে। ভালো মনের মানুষ হবে, গরিব-অসহায় মানুষের পাশে থাকবে, চিকিৎসা দেবে।’


আসিফ রহমান নিহাল বলেন, ‘আব্বু-আম্মু বাসায় না থাকা বড় অনুপ্রেরণা। আমার আম্মু প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে চাকরি করতে যান। তাই প্রতিনিয়ত আতঙ্কে ভুগতাম, তিনি ঠিকমতো যেতে পারলেন কিনা। ভাবতাম, তাঁরা আমার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছেন, ভালো কিছু করার জন্য আমাকেও ঝুঁকি নিতে হবে।’


কীভাবে পড়লে এমন ফল করা যায়? এ প্রশ্নের জবাবে নিহাল বলেন, ‘আমার পড়ার কোনো রুটিন ছিল না, যা প্ল্যান করা হতো তা শেষ করতে পারতাম না। আমি ধারাবাহিকতা রক্ষা করে পড়েছি। প্রচুর প্রশ্ন সমাধান করেছি, অনেক পরীক্ষা দিয়েছি। ভর্তি প্রস্তুতির সময় ৮ ঘণ্টা পড়া উচিত। যারা চাপমুক্ত থাকতে পারবে, তারাই ভালো করবে।’