- অর্থনীতি
- সুযােগ থাকলে গ্যাসের দাম কমানাে হােক
সুযােগ থাকলে গ্যাসের দাম কমানাে হােক

প্রতীকী ছবি।
সুযোগ থাকলে গ্যাসের দাম কমানোর দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা। গতকাল সোমবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে আগামী অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় এ দাবি জানান তাঁরা। ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত আলোচনায় অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর নেতাদের মতামত নিলেও নিজে তেমন কিছু বলেননি। তবে বাজেট নিয়ে তাঁদের দেওয়া প্রস্তাবগুলো বিবেচনায় নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গাড়ির গড় গতি ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার। এটাকে ৬০ কিলোমিটারে উন্নীত করতে পারলে রপ্তানি সক্ষমতা ৭ শতাংশ বেড়ে যাবে।
এ ছাড়া রাজস্ব আহরণ বাড়াতে কর ফাঁকি রোধে পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, দেশের প্রায় তিন কোটি মানুষ হোল্ডিং ট্যাক্স দিচ্ছে, অথচ ব্যক্তি শ্রেণির করদাতা মাত্র ২৭ লাখ। আমদানি শুল্ক কমিয়ে আয়কর ও ভ্যাটের আওতা বাড়ানোরও পরামর্শ দেন তিনি।
তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, মূল্যস্ফীতি বেড়ে বর্তমানে বিশ্ববাজার ভালো অবস্থায় নেই। এ কারণে ব্যবসায়ীদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি দেশের শিল্প খাতে গ্যাসের দাম ১৭৬ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর পাশাপাশি গত দুই মাসে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে তিন দফা। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম কমে আসায় দেশেও দাম কমিয়ে আনা দরকার। এ ছাড়া বস্ত্র খাতে উৎসে কর ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে আগামী পাঁচ বছরের জন্য দশমিক ৫০ শতাংশ করার দাবি জানান তিনি।
উৎসে কর কমানোর পাশাপাশি এ কর আদায় চূড়ান্ত হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ । সংগঠনটির নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, নিয়ম অনুযায়ী উৎসে কর কাটার পর চূড়ান্ত কর প্রদানের সময় তা সমন্বয় করা হয়। কিন্তু বর্তমানে উৎসে কর আদায় বেশি হলেও ফেরত বা সমন্বয়ের বিধান স্থগিত রাখা হয়েছ। তাই এ কর কমানোর পাশাপাশি কর আদায়কে চূড়ান্ত হিসেবে ঘোষণা দেওয়া প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, ছোট উদ্যোক্তাদের অনেকে সাব-কন্ট্রাকে কাজ করেন। কিন্তু তাঁদের আয়ের ওপর ৩০ শতাংশ কর ধার্য রয়েছে। এটা প্রত্যাহার করা উচিত।
রপ্তানির ক্ষেত্রে নগদ সহায়তা প্রাপ্তিতে সব ধরনের জটিলতা অবসানের পাশাপাশি এর ওপর আয়কর ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করার দাবিও জানিয়েছে বিকেএমইএ। এর পক্ষে সংগঠনটির যুক্তি হচ্ছে, অন্যান্য খাতকে সরাসরি প্রত্যাবসিত মূল্যের ওপর নগদ সহায়তা দেওয়া হলেও বস্ত্র খাতকে বস্ত্রমূল্যের ওপর নগদ সহায়তা দেওয়া হয়, যা অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়। এতে এ খাতের রপ্তানিকারকদের নগদ সহায়তা পেতে নানা হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। আবার কখনও কখনও উদ্যোক্তারা ন্যায্য পাওনাও পাচ্ছেন না। এর আগে ট্যারিফ কমিশনও বস্ত্র খাতের ক্ষেত্রে সরাসরি প্রত্যাবসিত রপ্তানি মূল্যের ওপর নগদ সহায়তা প্রদানের সুপারিশ করে। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার বলেন, প্রয়োজনে দাম বাড়িয়ে হলেও কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস চাওয়া হয়েছিল একসময়। এজন্য গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু এখন বিশ্ববাজারে গ্যাসের দাম কমে এসেছে। তাই সুযোগ থাকলে দেশেও গ্যাসের দাম কমানোর প্রস্তাব করেন তিনি।
এ ছাড়া আগামী বাজেটে করের আওতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রামে সারাদেশের ৪৮ শতাংশ অর্থনৈতিক কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। কিন্তু এ দুই বিভাগ থেকে মোট করের প্রায় ৯০ শতাংশ আসে। মো. সামীর সাত্তার বলেন, কর-জিডিপির অনুপাত বাড়ানোই হবে আগামী বাজেটের মূল চ্যালেঞ্জ। তাই অন্যান্য অঞ্চল থেকেও কর আদায় বাড়ানোর প্রস্তাব করেন তিনি।
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান যদি কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ করে, তাহলে সরবরাহ চার্জের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট কাটা হয়। এর ফলে ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য কিনলে তার দাম বেশি হয়। তাই এক্ষেত্রে ভ্যাট কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)। এ ছাড়া যেসব ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান শুধু একটি পণ্য বিক্রি করে এবং যারা একাধিক ব্র্যান্ডের পণ্য বিক্রি করে তাদের জন্য কিছু সুযোগ–সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাবও করে সংঠগঠনটি।
মন্তব্য করুন