- অর্থনীতি
- সূর্যমুখীর হাসিতে আপ্লুত কৃষক
সূর্যমুখীর হাসিতে আপ্লুত কৃষক

খুলনা নগরীর বয়রা এলাকায় বিস্তীর্ণ জমিতে চাষ হয়েছে সূর্যমুখীর-সমকাল
খুলনা নগরীর বয়রা এলাকায় পরিবেশ অধিদপ্তর অফিসের পেছনে গেলে দেখা মিলবে বিস্তীর্ণ জমিতে চাষ করা হয়েছে সূর্যমুখী। গাছে এরই মধ্যে ফুটেছে ফুল। দৃষ্টিনন্দন সূর্যমুখী দেখতে ভিড় করছেন অনেকে। এখানে সরকারি দেড় বিঘা জমি লিজ নিয়ে সূর্যমুখীর আবাদ করেছেন মোতালেব হোসেন। তিনি জানান, লাভজনক হওয়ায় এবারই প্রথম সূর্যমুখী চাষ করেছেন। কৃষি অফিস থেকে তাঁকে বিনামূল্যে দেড় কেজি বীজ ও তিন প্রকারের ৩০ কেজি সার দেওয়া হয়েছে। চাষাবাদে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১২ হাজার টাকা। ফলন খুব ভালো হওয়ায় বিঘায় অর্ধলাখ টাকা লাভের আশা করছেন।
কয়রা উপজেলার পাটুরিয়া গ্রামের কৃষক জয়ন্ত মণ্ডল ও ব্রতী রানী দম্পতি গত বছর সূর্যমুখীর চাষ করেছিলেন ১ বিঘা জমিতে। এ বছর করেছেন সাড়ে ৪ বিঘা জমিতে। তাঁরা জানান, কৃষি অফিস থেকে এ বছর বিনামূল্যে বীজ ও সার দেওয়ার তথ্য পেয়ে বেশি জমিতে চাষ করেছেন। তাছাড়া গত বছর তাঁদের লাভও হয়েছিল। কৃষি অফিস তাদের বিনামূল্যে ৫ কেজি বীজ ও প্রয়োজনীয় সার দিয়েছে।
শুধু এ দু’জন নন; খুলনায় চলতি বছর ১২ হাজার ৬০০ কৃষক সূর্যমুখী চাষ করেছেন ১ হাজার ৬৯৮ হেক্টর জমিতে। অথচ গত বছর চাষ হয়েছিল মাত্র ৪৫ হেক্টর জমিতে। সেই হিসাবে এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৯০ হেক্টর জমি। তবে লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ২০ গুণ জমিতে এখন শোভা পাচ্ছে সূর্যমুখী।
সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের এমন আগ্রহের কারণ কম সময় ও ব্যয়ে অধিক লাভ। সূর্যমুখীর বীজ থেকে উৎপাদিত ভোজ্যতেলের ভালো দাম থাকায় চাষাবাদ খরচের কয়েক গুণ লাভ হচ্ছে। এ ছাড়া সরকার ভোজ্যতেলের বাজারে ভারসাম্য আনতে সূর্যমুখী চাষের জন্য কৃষককে বিনামূল্যে বীজ ও সার দিচ্ছে। সূর্যমুখীর বাম্পার ফলনেও হাসি ফুটেছে কৃষকদের মুখে। অনেকে পতিত জমিতেও চাষ করেছেন।
সরেজমিন নগরীর বয়রা এলাকায় পরিবেশ অধিদপ্তর অফিসের পেছনে দেখা যায়, ৭-৮ কৃষক বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে সূর্যমুখীর আবাদ করেছেন। গাছে বড় আকৃতির ফুল এসেছে, বাতাসে দুলছে সেই ফুল। দৃষ্টিনন্দন সূর্যমুখী দেখতে ভিড় করছেন অনেকে। কেউ ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন। কৃষকরা জানান, ক্ষেতে ঢোকার জন্য দর্শনার্থীদের কাছ থেকে ২০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। কেউ ফুল নিতে চাইলে আকৃতি অনুযায়ী নিচ্ছেন ২০, ৩০ ও ৫০ টাকা।
কয়রা উপজেলার হাতিয়াডাঙ্গা গ্রামের কৃষক সৌরভ কান্তি বাছাড় জানান, গত বছর তিনি ২ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছিলেন। তবে ভালো ফলন পাননি। এ কারণে এবার একই জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন। তাঁর ভাই ও ভাইপো আরও ১১ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী লাগিয়েছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার অতিরিক্ত উপপরিচালক মোসাদ্দেক হোসেন জানান, ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটাতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বিনামূল্যে বীজ ও সার সরবরাহ করায় অনেক কৃষক আগ্রহী হয়েছেন। খুলনায় এ বছর রেকর্ড পরিমাণ জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে। বন্ধ থাকা ৭টি পাটকলের পতিত প্রায় ৫-৬ হেক্টর জমিতেও সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে। এই সূর্যমুখী ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে। ১ হাজার ৬৯৮ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত সূর্যমুখীর বীজ থেকে সাড়ে সাতশ টন তেল উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন তাঁরা।
তিনি জানান, কৃষকরা নভেম্বরের মাঝামাঝিতে সূর্যমুখীর বীজ বপন করেন। এক বিঘা জমির জন্য ১ কেজি বীজ প্রয়োজন হয়। ১০০ থেকে ১১০ দিনের মধ্যে তেল উৎপাদনের জন্য সূর্যমুখীর বীজ সংগ্রহ করা হবে। এক বিঘা জমিতে ফলন হয় ২২-২৩শ কেজি। এ থেকে তেল পাওয়া যায় ৩৫০ থেকে ৪০০ লিটার। এক বিঘা জমিতে চাষাবাদে ব্যয় হয় ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা এবং তেল উৎপাদন করে আয় হয় ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকা। অর্থাৎ বিঘা প্রতি লাভ হয় প্রায় ৫৩ থেকে ৫৫ হাজার টাকা।
মন্তব্য করুন