সমকাল: ভোগ্যপণ্য আমদানি করতে গিয়ে এবারে কেমন অভিজ্ঞতা হলো?

আবুল বশর চৌধুরী: রমজানের পণ্য আমদানি করতে গিয়ে এবারে খুব বাজে অভিজ্ঞতা হয়েছে। এবার সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছে ডলার। কয়েক দশক ধরে পণ্য আমদানি করলেও ডলার নিয়ে এমন সংকটের মুখে পড়িনি কখনও। এলসি করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়েছে। সমস্যা হয়েছে পণ্য দেশে আনার পরও। ডলার না থাকায় দিনের পর দিন পণ্য সাগরে ভেসেছে এবার। এত দীর্ঘ সময় রমজানের পণ্য নিয়ে ব্যবসায়ীদের অপেক্ষা করতে হয়নি আগে কখনও।

সমকাল: রাশিয়া ও ইউক্রেনের শস্য পরিবহন চুক্তি নবায়ন হয়েছে। গমের বাজারে যে দুশ্চিন্তা ছিল সেটি কী দূর হয়েছে মনে করেন? 

আবুল বশর চৌধুরী: দুশ্চিন্তা কিছুটা দূর হয়েছে। এই চুক্তি নবায়ন করা জরুরি ছিল। অন্যথায় বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্ব সংকটে পড়ত। চুক্তির ফলে শস্য পরিবহনে এখন আর সমস্যা হবে না। তবে দুই মাস না হয়ে এটি আরও দীর্ঘমেয়াদি হলে ভালো হতো। পণ্য পরিবহনে জটিলতা কাটলেও এখন নতুন আরেক সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি আমরা। কৃষ্ণ সাগরে প্রবেশের মুখে জাহাজে তল্লাশি করা হয়। সেটি করতে গিয়ে ৩০ থেকে ৪০ দিন বাড়তি সময় মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এতে করে পণ্যের ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।

সমকাল: এই তল্লাশির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার উদাহরণ কী আছে?

আবুল বশর চৌধুরী: আমাদের ৫০ হাজার টন গম নিয়ে ইউক্রেন থেকে আসছে এমভি আইডিসি ডায়ামন্ড নামের একটি জাহাজ। এটি আগামী ৪ কিংবা ৫ এপ্রিল নোঙর করবে চট্টগ্রাম বন্দরে। এই জাহাজটিকে তল্লাশির জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে মোট ৪২ দিন। এ জন্য প্রতিদিন ১৭ থেকে ২০ হাজার ডলার অতিরিক্ত জাহাজ ভাড়া গুনতে হবে আমাদের। একইভাবে ৩০ দিনের অতিরিক্ত সময় অপেক্ষা করে বন্দরে নোঙর করেছে টিকে গ্রুপের জাহাজ এমভি এগ্রি। প্রায় ৫০ হাজার টন গম নিয়ে এ জাহাজটি নোঙর করেছে। একই পরিমাণ গম নিয়ে নোঙর করেছে বসুন্ধরা গ্রুপের জাহাজ এমভি এসএসআই ভিজিল্যান্ড। এই জাহাজটিকেও কৃষ্ণ সাগরে প্রবেশের আগে ৩০ দিনেরও বেশি অপেক্ষা করতে হয়েছে। জাহাজে বিপজ্জনক কিছু আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে এই তল্লাশি করে রাশিয়া, ইউক্রেন ও ইউএনএর যৌথ টিম।

সমকাল: আমদানি কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকলে আটা ও ময়দার দাম কমবে কিনা?

আবুল বশর চৌধুরী: আমদানির সঙ্গে ঠিক রাখতে হয় সরবরাহ প্রক্রিয়াও। ডলারের সমস্যা এখনও দূর হয়নি। আগের চেয়ে কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে পরিস্থিতি। এটিকে স্থিতিশীল করতে হবে। ডলারের বিপরীতে টাকার মান এখন অনেক কম। এটিও আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। ব্যবসার অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করা গেলে পণ্যের দাম অবশ্যই আরও কমবে।

সমকাল: রাশিয়া ও ইউক্রেনের চুক্তি দুই মাস পর নবায়ন না হলে গম আমদানিতে বিকল্প কী উৎস আছে বাংলাদেশের?

আবুল বশর চৌধুরী: এ বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে এখনই। দু’মাস পর এমন সংকট সামনে আসতে পারে। তাই বিকল্প কোনো উৎস থেকে আমদানি করতে হবে গম। সেটি কোন দেশ হতে পারে তা নিয়ে এখনই ভাবতে হবে দায়িত্বশীলদের। চালাতে হবে কূটনৈতিক আলাপও। আমদানিতে যদি আমরা সাশ্রয় করতে পারি তাহলে সেটির সুফল পাবেন সাধারণ ভোক্তারা।

 সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সারোয়ার সুমন