- অর্থনীতি
- সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির প্রভাব প্রত্যাশার চেয়ে কম
সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির প্রভাব প্রত্যাশার চেয়ে কম

সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় সুবিধাভোগীদের বাছাই প্রক্রিয়ায় গলদ রয়েছে। এ ছাড়া বাস্তবায়ন পর্যায়ে নানা ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে এ কার্যক্রমের প্রভাব প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম। গতকাল বুধবার ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির সংস্কার সম্পর্কিত নীতি সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন। ওয়েভ ফাউন্ডেশন এবং দি এশিয়া ফাউন্ডেশন যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সম্মেলনে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় দেওয়া অর্থ যেন সরাসরি উপকারভোগীর হাতে পৌঁছায়, সে জন্য মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গভর্নমেন্ট টু পাবলিক (জিটুপি) পদ্ধতিতে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এ পদ্ধতিতেও অনেক সময় অন্যরা অর্থ তুলে নেওয়ায় প্রকৃত উপকারভোগী তা পাচ্ছেন না।
তিনি বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্রের ঠিকানা জটিলতায় ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে কম মূল্যে পণ্য দেওয়ার কার্যক্রমও পুরোপুরি বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। তাঁর নিজের নির্বাচনী এলাকায় এ কার্যক্রমের প্রায় ৩০ শতাংশ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে। বাকি অর্থ দরিদ্রদের কাছে পৌঁছানো যায়নি। তাই এ খাতে অর্থ বরাদ্দ রাখার পরও বণ্টন সমস্যায় সুফল মিলছে না।
তাঁর মতে, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য-উপাত্তের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু সংস্থাটি থেকে হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যায় না। করোনার পর দেশে কী পরিমাণ দারিদ্র্যের হার দাঁড়িয়েছে তা নির্ধারণ করতে পারেনি বিবিএস। এ নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার করলেও কোনো লাভ হয়নি । তাই এসব কর্মসূচির যথাযথ বাস্তবায়নে বিবিএসের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ জন্য তিনি সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের নিজস্ব জনবল বাড়ানোর ওপর জোর দিতে বলেন। কিন্তু দুর্নীতির কারণে তিন দফায় এদের নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
পিকেএসএফের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, সরকার প্রতি অর্থবছরে সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়াচ্ছে। কিন্তু সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত আমলা ও মন্ত্রীরা অনেক ক্ষেত্রে অর্থ চুরি করে দেশের বাইরে পাচার করে দিচ্ছেন। পাচারকারীদের চিহ্নিত করা গেলেও এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
তিনি বলেন, সামাজিক কর্মসূচির আওতায় দরিদ্রদের বেশি দিন সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব নয়। এ জন্য যে ব্যক্তি কর্মক্ষম, তাকে কাজ দিতে হবে। সরকারের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদেরও এগিয়ে আসতে হবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ আর্থসামাজিকভাবে এগিয়েছে। আর এতেই সরকার আত্মতুষ্টিতে ভুগছে। কিন্তু আত্মতুষ্টিতে ভোগার মতো অবস্থা এখনও আসেনি। অনেক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়ে গেছে। তাদের বাদ দিয়ে উন্নয়নের কথা ভাবা উচিত হবে না।
সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আসিফ শাহান। এতে বলা হয়, বর্তমান জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। জাতীয় বাজেটের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এ খাতে ব্যয় করা হলেও কর্মসূচিগুলোর প্রকৃত প্রভাব প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম। এ অবস্থা নিরসনে ব্যয়িত অর্থের দক্ষতা ও কার্যকারিতা বাড়াতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।
মূল প্রবদ্ধে আরও বলা হয়, সামাজিক কর্মসূচির আওতায় সুবিধাভোগীদের বাছাই প্রক্রিয়া সুষ্ঠু নয়। এ ছাড়া সুবিধা বণ্টনে অনিয়ম ও অপব্যবহার রয়েছে। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির অধীনে বাস্তবায়নাধীন সব কার্যক্রমের যথাযথ তদারকি হয় না। পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময়ের পরে উপকারভোগীদের অবস্থার মূল্যায়ন এবং মূল্যায়নের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী পরিকল্পনা প্রণয়নেরও তেমন কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নেই। ফলে কত মানুষের দারিদ্র্য পরিস্থিতির উন্নয়ন হলো বা হলো না, তারও কোনো যথাযথ বা সঠিক পরিসংখ্যান নেই।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শারমিন্দ নিলোর্মী, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবীর, ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী, উপপরিচালক কানিজ ফাতেমা প্রমুখ।
মন্তব্য করুন