আইএমএফের শর্তের আলোকে ঋণে ৯ শতাংশ সুদহারের ঊর্ধ্বসীমা উঠে যাচ্ছে। আগামী জুলাই থেকে বন্ডের গড় সুদহারের সঙ্গে ব্যাংক রেট যোগ করে নতুন পদ্ধতির সুদহার ব্যবস্থা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে সুদহার বাড়বে। এ রকম অবস্থায় আগে থেকেই আমানত সংগ্রহে জোর দিয়েছে অনেক ব্যাংক। কিছু ব্যাংক এরই মধ্যে ৮ শতাংশ পর্যন্ত সুদে মেয়াদি আমানত নিচ্ছে। ঋণের সুদহারও ঊর্ধ্বমুখী। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে কিছুদিন ধরে ঋণের সুদহারে সীমা বহাল রাখার দাবি জানানো হচ্ছে। অন্যদিকে অর্থনীতিবিদের অনেকেই বলছেন, সুদহার বাজারভিত্তিক করাই যৌক্তিক।

সামগ্রিকভাবে ঋণে ৯ শতাংশ সুদহারের সীমা নির্ধারিত থাকলেও সম্প্রতি ভোক্তাঋণের আওতায় বিতরণ করা গাড়ি ও ব্যক্তিগত ঋণে ১২ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নেওয়া যাবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে লিখিতভাবে কোনো নির্দেশনা না দেওয়ায় বেশিরভাগ ব্যাংক তা কার্যকর করেনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি মাসেই ঋণ ও আমানতের গড় সুদহার একটু করে বাড়ছে। গেল ফেব্রুয়ারিতে ঋণের গড় সুদহার দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ২৭ শতাংশ। একই মাসে আমানতের গড় সুদহার হয়েছে ৪ দশমিক ৩১ শতাংশ। আগের মাস জানুয়ারিতে যা ৭ দশমিক ২৪ এবং ৪ দশমিক ২৯ শতাংশ ছিল। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে গড় হিসাবে ঋণে ৭ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ এবং আমানতে ৪ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ ছিল।

বেসরকারি একটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, অনেক ব্যাংক এই মুহূর্তে তারল্য সংকট না থাকলে আমানত বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছে। সুদহারের নতুন পদ্ধতি বাস্তবায়ন হলে এটি আরও বাড়তে পারে বিবেচনায় তারা আমানত বাড়াচ্ছে। সংকটে থাকা ব্যাংকগুলো আমানত সংগ্রহের জন্য বাড়তি সুদ অফার করার পাশাপাশি কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ে পাঠাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ডলার সংকটের কারণে চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর বিপরীতে বাজার থেকে এক লাখ কোটি টাকার বেশি উঠে এসেছে। এতে কিছু ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার পাশাপাশি টাকার সংকট রয়েছে। এর মধ্যে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগ চাহিদা বৃদ্ধিসহ কিছু কারণে ঋণ চাহিদা বেড়েছে। পরিস্থিতি সামলাতে প্রতিনিয়তই কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং এক ব্যাংক আরেক ব্যাংকের কাছ থেকে ধার নেওয়ার প্রবণতাও বেড়েছে।

গতকাল আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে স্বল্পমেয়াদি ধারের পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ১৯৮ কোটি টাকা। আগের দিন বিভিন্ন ব্যাংক ধার করে ৬ হাজার ৫২৯ কোটি টাকা। আর বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের ধারের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৯০৬ কোটি টাকা। চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা ধার করে বিভিন্ন ব্যাংক।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মুক্তবাজার অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সুদহারের সীমা আরোপ করা যায় না। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা ৯ শতাংশ ঠিক করে রেখেছে। এখন আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদনের অন্যতম শর্ত সুদহার বাজারভিত্তিক করা। এ অবস্থায় ঋণে সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা ৯ শতাংশে নির্ধারিত না রেখে বিদ্যমান ২, ৫, ১০, ১৫ ও ২০ বছর মেয়াদি বন্ডের গড় সুদহারের সঙ্গে ব্যাংক রেট যোগ করে যা দাঁড়ায়, তার সমান সুদ নেওয়ার পদ্ধতি চালু করতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি মাসে বন্ডে ৮ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ থেকে ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ সুদ ছিল। অন্যদিকে বর্তমানে ব্যাংক রেট বা বাংলাদেশ ব্যাংকের তহবিলের সুদহার ৪ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক এখনও নতুন পদ্ধতিতে সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা ঠিক করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি। তবে ব্যাংক খাতের এ নিয়ন্ত্রক সংস্থার অভ্যন্তরীণ বৈঠকে এমন সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানা গেছে।

এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বর্তমান বাস্তবতায় সুদহারের সীমা তুলে দেওয়া কিংবা ৯ শতাংশ থেকে বাড়ানোর সুপারিশ উঠে আসে।