উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সঞ্চয় ভাঙানোর প্রবণতা বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে সঞ্চয়পত্র কেনার চেয়ে তিন হাজার ৫১০ কোটি টাকা বেশি ভাঙিয়েছেন গ্রাহকরা। এর মধ্যে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ৭ হাজার ১০৫ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র কেনার বিপরীতে ভাঙানো হয় ৭ হাজার ৫৪৫ কোটি টাকার। শুধু এক মাসেই কেনার চেয়ে বেশি ভাঙানো হয়েছে ৪৪০ কোটি টাকা।

গত ফেব্রুয়ারিতে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। গড় মূল্যস্ফীতি ঠেকেছে ৮ দশমিক ১৪ শতাংশে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, মানুষের প্রকৃত জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বেশি। গত বুধবার প্রকাশিত সানেমের জরিপ অনুযায়ী, মানুষের আয় আগের মতো থাকলেও ব্যয় অনেক বেড়েছে। এরকম অবস্থায় খাদ্য অভ্যাস বদল করেছে অনেক মানুষ। কেউ-কেউ এখন সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে, নতুন সঞ্চয় বিমুখ হচ্ছে। ঋণ করেও চলছে অনেকে। আবার দরিদ্রদের মধ্যে ৩৭ শতাংশ এখন এক বেলা কম খাচ্ছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সঞ্চয়পত্রের পাশাপশি ব্যাংকগুলো তারল্যও টানাটানিতে পড়েছে। ধারদেনাসহ নানা উপায়ে দৈনন্দিন চাহিদা মেটাচ্ছে অনেক ব্যাংক। এ সময়ে সঞ্চয়পত্র থেকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় ব্যাংকের ওপর চাপ বাড়বে। চলতি অর্থবছর সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। তবে ঋণ না বেড়ে উল্টো কমছে। অথচ এর আগে কয়েক অর্থবছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। সব মিলিয়ে সঞ্চয়পত্রে সরকারের মোট ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৬০ হাজার ৫০১ কোটি টাকায়। বিপুল অঙ্কের এ সঞ্চয়পত্রের বিপরীতে সরকারকে অনেক বেশি সুদ গুনতে হচ্ছে। পরিস্থিতি সামলাতে গত কয়েক বছর ধরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমাতে নানা উদ্যোগ নেয় সরকার। এতদিন না কমলেও উচ্চ মূল্যস্ফীতির এ সময়ে কমছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে মোট ৫৫ হাজার ৮৬২ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। একই সময়ে ভাঙানো হয়েছে ৫৯ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা। মূলত গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কেনার চেয়ে ভাঙানো বেশি ছিল তিন হাজার ৫০৮ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারিতে আবার ৪৪০ কোটি টাকা বেশি ভাঙানো হয়েছে। এছাড়া জুলাই, আগস্ট এবং জানুয়ারি মাসে বিক্রি বেশি ছিল ৪৩৮ কোটি টাকা।