- অর্থনীতি
- নতুন অপারেটরে পাল্টে যাবে অনেক হিসাব
বন্দরের বহির্নোঙরে শিপ হ্যান্ডলিং ও বার্থ অপারেটর নিয়োগ
নতুন অপারেটরে পাল্টে যাবে অনেক হিসাব

ছবি: ফাইল
চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে নতুন অপারেটর নিয়োগে পাল্টে যাবে অনেক হিসাবনিকাশ। চ্যালেঞ্জে পড়বে তালিকাভুক্ত বর্তমান ৩২ অপারেটরও। এখন যে দরে কাজ হচ্ছে নতুন অপারেটররা তার চেয়ে কম দামে করতে চাইবে। বার্ষিক টার্নওভার বাড়াতে তারা চাইবে কাজের অগ্রাধিকারও। এটি সামলাতে গেলে ভাগ করতে হবে কাজ। অ্যাসোসিয়েশনকে সাজাতে হবে নতুন ছকও। নতুন অপারেটর নিয়োগের ইস্যুতে তাই বেকায়দায় আছে বাংলাদেশ শিপ হ্যান্ডলিং ও বার্থ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন। হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য সামলাতে ঢেলে সাজাতে হবে তাদের সবকিছু।
নতুন নিয়োগ ইস্যুতে বন্দরের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে গতকাল রোববার মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করতে পারেনি তারা। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েও পরে পিছু হটতে হয়েছে তাদের।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ শিপ হ্যান্ডলিং ও বার্থ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান একেএম শামসুজ্জামান রাসেল বলেন, ‘যথাযথ কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমতি নিলেও নগর বিশেষ শাখার অনুমতি মেলেনি। তাই মানববন্ধন কর্মসূচি শেষ পর্যন্ত স্থগিত করেছি আমরা।’ নতুন লাইসেন্স পাওয়া এক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘দীর্ঘদিনের মনোপলি ব্যবসা ভাঙতেই এই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখন প্রতিযোগিতা বাড়বে। দামও কমবে।’ চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে বর্তমান রেটের চেয়ে তার প্রতিষ্ঠান কম দামে কাজ করবে বলেও জানান তিনি। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘এখন প্রতি টন কয়লা খালাসে ৬৫ টাকা দর আছে। আমরা এটি অর্ধেকে হলেও কাজ করব।’
মানববন্ধন ডেকেও করা হলো স্থগিত
বাংলাদেশ শিপ হ্যান্ডলিং ও বার্থ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন গতকাল মানববন্ধন ডেকেও তা স্থগিত করেছে। নগর পুলিশের বিশেষ শাখা তাদের অনুমতি দিলেও গতকাল ৩০ এপ্রিল তা প্রত্যাহার করে নেয় তারা। তাই প্রথম কর্মসূচি পালনেই হোঁচট খেল তারা। আগে কর্মবিরতির মতো কঠিন কর্মসূচি চিন্তা করলেও এখন সেখান থেকেও সরে এসেছে অ্যাসোসিয়েশন। আলোচনার মাধ্যমে এখন সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজছে তারা।
কেন এতটা কঠোর হলো বন্দর
চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাস বন্দর জেটি এবং বন্দরের বহির্নোঙর– দুই স্থানেই সম্পন্ন হয়। জেটিতে পণ্য ওঠানামার সঙ্গে সম্পৃক্তদের বার্থ অপারেটর এবং বহির্নোঙরে পণ্য খালাসের কাজে নিয়োজিতদের শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর বলে। চট্টগ্রাম বন্দর সীমায় জাহাজের আগমনী বার্তা ঘোষণার পর শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন তাদের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানকে পণ্য খালাসের জন্য কাজ বরাদ্দ দেয়। যারা কাজ পায় তারাই কেবল পণ্য খালাস করতে পারে।
৩২টি প্রতিষ্ঠান পাঁচ বছরের জন্য নিয়োগ পেয়ে এমন কাজ করছে ২০১৫ সাল থেকে। নিয়ম অনুযায়ী ২০২১ সালে নতুন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা থাকলেও আইনি মারপ্যাঁচে তা ঠেকিয়ে রাখে আট শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর। তাই এবার কঠোর হয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তারা পুরো কার্যক্রম শেষও করছে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে।
৫৬ থেকে যেভাবে ৩২ হলো
২০০৭ সালের আগে আমদানিকারকদের পছন্দমতো অপারেটর দিয়ে পণ্য খালাসের সুযোগ ছিল। ২০০৭ সালে সরকার রাজস্ব সুরক্ষার স্বার্থে শিপ হ্যান্ডলিংয়ের কাজে নিয়োজিত ৫৬টি স্টিভিডোর কোম্পানিকে বার্থ অপারেটর, শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর হিসেবে ভাগ করে। ২০১৫ সালে শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর নিয়োগের জন্য টেন্ডার আহ্বান করে বন্দর। আগের ২১টি অপারেটরসহ মোট ৩২টি প্রতিষ্ঠান শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর হিসেবে যুক্ত হয়। এর মধ্যে ৫টি অপারেটর ইনহাউস পণ্য (নিজস্ব কোম্পানির আমদানি হওয়া পণ্য) খালাস করে। বাকি ২৭টি অপারেটর প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন শিল্প গ্রুপ, আমদানিকারকের পণ্য হ্যান্ডলিং করে থাকে। এই খাতে প্রায় ২৫০০ শ্রমিক কাজ করে।
মন্তব্য করুন