- অর্থনীতি
- চিনির দামে রেকর্ড, বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়
চিনির দামে রেকর্ড, বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেশি, সরকারের আমদানির সিদ্ধান্ত চান মিলাররা

নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে চিনির বাজার। কোথাও মিলছে না প্যাকেটজাত চিনি। তিন দিনের ব্যবধানে আরও ৫ টাকা বেড়ে খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায়। আমদানিকারকদের দাবি, আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির রেকর্ড দাম বেড়েছে। এর প্রভাব পড়ছে অভ্যন্তরীণ বাজারে। এমন পরিস্থিতিতে বেশি দাম দিয়ে চিনি আমদানি করবেন কিনা, সেই বিষয়ে সরকারের মত চেয়েছেন তাঁরা।
বাজারে দাম স্বাভাবিক রাখতে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চিনির আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৫ শতাংশ কমিয়েছে। আগামী ৩০ মে পর্যন্ত এ সুবিধা পাবেন আমদানিকারকরা। শুল্কছাড়ের পর গত ৬ এপ্রিল ৩ টাকা কমিয়ে খোলা চিনির কেজি ১০৪ এবং প্যাকেটজাত চিনির কেজি ১০৯ টাকা নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেট, সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজার ও কারওয়ান বাজারে খোঁজ নিয়ে প্যাকেটজাত চিনি পাওয়া যায়নি। আর খোলা চিনি মিললেও ক্রেতাকে কেজিপ্রতি গুনতে হয়েছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। কোথাও আরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা।
সরকারি সংস্থা টিসিবির হিসাবে দেখা গেছে, এক মাসে চিনির দাম বেড়েছে ১৫ শতাংশ। আর এক বছরে বেড়েছে ৬২ শতাংশের বেশি।
দাম বেড়ে যাওয়ায় খুচরা ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। তাঁদের দাবি, চিনির বাজারে সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। পাইকারি বাজারে দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। ডিলাররা দাম বেশি নিলেও দিচ্ছেন না ক্রয় রসিদ। এ ব্যাপারে অভিযোগ দিয়েও তদারকি সংস্থার সদস্যদের দেখা পাওয়া যায় না।
মোহাম্মদপুরের রহমান জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. মনির বলেন, প্যাকেট চিনি অনেক দিন ধরে পাওয়া যাচ্ছে না। খোলা চিনি পাইকারি পর্যায়ে কেনা পড়ে ১৩০ টাকার বেশি। তবে ক্রয় রসিদ দিচ্ছেন না ডিলাররা। তিন দিন ধরে চিনি বিক্রি বন্ধ রেখেছি। কারণ, দাম বেশি চাইলে ক্রেতাদের নানা কথা শুনতে হয়। প্রায় একই কথা বলেছেন সেগুনবাগিচার মহিন জেনারেল স্টোরের বিক্রয়কর্মী মো. সুমন। তিনি বলেন, তিন দিন আগে পাইকারিতেই কেজি ১৩০ টাকার মতো পড়েছে। এখন দাম আরও বেড়েছে। এ জন্য কেনা হয়নি, বিক্রিও করি না।
কারওয়ান বাজারের মালিহা স্টোরের বিক্রয়কর্মী রিয়াজ হোসেন বলেন, কয়েক মাস ধরেই বাজারে চিনির সংকট। ঈদের পর সংকট যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে দামও। এখন ১৪০ টাকার কমে বিক্রি করা যায় না। একই বাজারের রতন স্টোরের রতন মিয়া বলেন, ডিলাররা দাম নিলেও কোনো ধরনের ভাউচার দেন না। এ বিষয়ে ভোক্তা অধিদপ্তরেও কয়েকবার ফোন দিয়েছি, কেউ তদারকি করছে না।
তিন কারণে চিনির দাম বাড়ছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. মফিজুল হক। তিনি বলেন, এক. গত পাঁচ-ছয় মাস আগে গ্যাসের সংকটে চিনি উৎপাদনে যে ঘাটতি তৈরি হয়েছিল, এখনও এর রেশ কাটেনি। দুই. আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দামে অনেক বেড়ে গেছে। তিন. ভারত বিশ্বের শীর্ষ চিনি উৎপাদনকারী দেশ। তবে দেশটিতে এবার আখের ফলন কম হওয়ায় তারা রপ্তানি বন্ধ রেখেছে।
দেশের অন্যতম শীর্ষ চিনি আমদানি ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপের জ্যেষ্ঠ সহকারী মহাব্যবস্থাপক তাসলিম শাহরিয়ার বলেন, দেশে চিনি উৎপাদন নেই বললেই চলে। পুরোটাই আমদানি করতে হয়। তবে বিশ্ববাজারে গত ৩৭ বছরের মধ্যে চিনির দর এখন সর্বোচ্চ। এ মাস আগেও চিনির টন ছিল ৫৮০ ডলারের মতো। দাম বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে ৬৭০ ডলারে। এত দামে চিনি আমদানি করে বাজারজাত করা খুব কঠিন হবে। চিনির ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন সরকারকেও ভাবতে হবে।
সরকারের সিদ্ধান্ত চান মিলাররা
আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত চিনির দাম ব্যাপক বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বেশি দামে চিনি আমদানি করবে কিনা, সে বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত চেয়েছে চিনি আমদানিকারক ও পরিশোধনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন। গতকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব বরাবর বাংলাদেশ সংগঠনটির মহাসচিব গোলাম রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ সিদ্ধান্ত চাওয়া হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন অপরিশোধিত চিনির দাম ৬৭৫ মার্কিন ডলার। অথচ এক মাস আগেও তা ছিল ৫২০ মার্কিন ডলার। এই বাস্তবতায় সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা চিনি আমদানিতে এলসি বা ঋণপত্র খুলতে ‘ভীতির সম্মুখীন’ হচ্ছেন। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ৬৭৫ ডলার দরে প্রতি টন চিনি আমদানি করলে আমদানি মূল্য প্রতি কেজিতে পড়বে ১৩১ টাকা; এর সঙ্গে শুল্ক, ভ্যাট ও অন্যান্য কর বাবদ কেজিতে আরও যুক্ত হবে ৩৫ টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লেও দেশের বাজারে খোলা চিনির দাম সে অনুপাতে বাড়েনি। এ কারণে অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা চিনি আমদানি করতে সাহস পাচ্ছেন না।
মন্তব্য করুন