রপ্তানি হওয়া পণ্যের বিপরীতে যে পরিমাণ আয় দেশে আসার কথা, তার পুরোটা আসছে না। এসব অর্থ কেন আসছে না, তা জানতে চেয়েছে ঢাকা সফররত আইএমএফ মিশন। গতকাল মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে আইএমএফ কর্মকর্তারা জানান, তাঁদের কাছে তথ্য রয়েছে, এ পর্যন্ত রপ্তানি আয়ের ৩০০ কোটি ডলার দেশে আসেনি। রপ্তানির এ অর্থ প্রত্যাবাসনে সরকারের কোনো উদ্যোগ আছে কিনা, সে বিষয়ে জানতে চান তাঁরা। এ ছাড়া আমদানি ও রপ্তানিতে ডলারের বিনিময় হার একই করলে সুবিধা-অসুবিধা কী কী এবং রপ্তানিতে সরকারের উদ্যোগ সম্পর্কেও জানতে চান তাঁরা। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।  

বাংলাদেশের জন্য অনুমোদিত ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তার শর্ত পূরণের অগ্রগতি পর্যালোচনায় আইএমএফের আট সদস্যের মিশন গত ২৫ এপ্রিল থেকে ঢাকা সফর করছে। গতকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তাঁরা।  রপ্তানি আয় প্রত্যাবাসন নিয়ে আইএমএফের প্রশ্নের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকই ভালো বলতে পারবে। তবে কভিডের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর বাণিজ্য বিরোধের অনেক ঘটনা ঘটেছে। এ কারণেও অপ্রত্যাবাসিত অর্থের পরিমাণ বাড়তে পারে। রপ্তানির বিপরীতে মূল্যহ্রাস এবং ঋণপত্রের বিপরীতে অর্থ পরিশোধের সময়সীমা বৃদ্ধির জন্যও এটি হতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, পণ্য জাহাজীকরণ শেষে রপ্তানির নথিপত্র আমদানিকারকের ব্যাংকে পাঠানোর পরের দিন থেকে সর্বোচ্চ ১২০ দিনের মধ্যে মূল্য দেশে নিয়ে আসতে হয়। ১২০ দিনের নির্ধারিত মেয়াদ পেরোনোর পরও দেশে আসেনি– এমন অর্থের পরিমাণ প্রায় ১৫০ কোটি ডলার।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বেশ কিছুদিন ধরে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারে অস্থিরতা চলছে। গত ৬ মাসে ডলারের বিপরীতে টাকার মান ২০ শতাংশের বেশি কমেছে। এ অবস্থায় বৈদেশিক মুদ্রার উচ্চ বিনিময় দরের সুবিধা নিতে রপ্তানিকারকদের একটি অংশ আয় প্রত্যাবাসনে দেরি করতে পারে। এ ছাড়া প্রত্যাবাসন না হওয়ার পেছনে অর্থ পাচারের ঘটনাও থাকতে পারে।
বৈঠকে আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে ডলারের বিনিময় হার একই হওয়া উচিত কিনা– জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, সব ক্ষেত্রে একই বিনিময় হার হওয়া উচিত। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকও আগামী জুলাই থেকে সব ক্ষেত্রে ডলারের মূল্য একই করার ঘোষণা দিয়েছে।

ইউরোপ-আমেরিকায় উচ্চ মূল্যস্ফীতির এ সময়ে রপ্তানি বাড়াতে সরকারের কৌশল জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রপ্তানিতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় কমাতে বিভিন্ন ধরনের নীতি-সহায়তা বাড়াচ্ছে সরকার। আগামীতে রপ্তানি আয়ে তেমন প্রভাব পড়বে না।   
জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ সমকালকে বলেন, রপ্তানি আয়ের প্রায় ৩০০ কোটি ডলার দেশে না আসার বিষয়ে আইএমএফ মিশন জানতে চেয়েছে। রপ্তানি বাড়াতে সরকারের কৌশল জানতে চেয়েছে। সরকারের কর্মপরিকল্পনা তাদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর সঙ্গে বৈঠক
গতকাল বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সঙ্গে পৃথক বৈঠক করে আইএমএফ মিশন। বিবিএসের মহাপরিচালক মতিয়ার রহমান সাংবাদিকদের বলেন, আইএমএফের পরামর্শ অনুযায়ী মূল্যস্ফীতির হিসাব করা হবে। নতুন পদ্ধতিতে খাদ্যপণ্য ১৫৩-এর জায়গায় ২৬৩টি হবে। মোট ৭২০ পণ্য থাকবে বাস্কেটে। এ অগ্রগতিতে তারা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। প্রয়োজনে কারিগরি সহায়তা দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছে তারা।

আইএমএফের সুপারিশের আগে থেকেই ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে জিডিপির হিসাব করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা ছিল। আগামী বছর থেকে তিন মাসের জিডিপি প্রকাশ করা হবে।