- অর্থনীতি
- ৩ কোটি টাকার বেশি সম্পদে বাড়তে পারে সারচার্জ
৩ কোটি টাকার বেশি সম্পদে বাড়তে পারে সারচার্জ

তিন কোটি টাকার বেশি সম্পদের ওপর সারচার্জ বাড়ানো হতে পারে আগামী অর্থবছরের বাজেটে। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রতিনিধি দলের সঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম ১৪ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।
বৈঠকে আগামী বাজেটে অর্থবিলের প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলো তুলে ধরেন এনবিআর কর্মকর্তারা। প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর অনুমোদন পেলে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে তিন কোটি টাকার বেশি সম্পদে সারচার্জ বাড়ানোর প্রস্তাব রাখা হতে পারে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী কোনো ব্যক্তির তিন কোটি টাকা পর্যন্ত নিট সম্পদে করের বাইরে সারচার্জ দিতে হয় না। তিন কোটি টাকা থেকে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত সম্পদ থাকলে অথবা নিজ নামে একাধিক গাড়ি থাকলে কিংবা সিটি করপোরেশন এলাকায় ৪ হাজার বর্গফুটের বেশি আয়তনের হাউস প্রোপার্টি থাকলে তাকে ১০ শতাংশ সারচার্জ দিতে হয়। এই সারচার্জ হয় তার দেওয়া করের ওপর ১০ শতাংশ হারে।
সম্পদের পরিমাণ ১০ কোটি থেকে ২০ কোটি টাকা হলে ২০ শতাংশ, ২০ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত সম্পদের ওপর ৩০ শতাংশ এবং ৫০ কোটি টাকার ওপরে সম্পদের জন্য ৩৫ শতাংশ সারচার্জ দিতে হয়। আগামী বাজেটে বিদ্যমান সারচার্জের ওপর আরও ৫ থেকে ১০ শতাংশ আরোপের প্রস্তাব করেছে এনবিআর।
এনবিআর কর্মকর্তারা বলেন, সম্পদ কর বা সারচার্জ হচ্ছে এক ধরনের মাশুল, যা ব্যক্তির সম্পদের দলিল মূল্যের ওপর আদায় করা হয়। ১৯৬৩ সালে এ অঞ্চলে সম্পদ কর (ওয়েলথ ট্যাক্স) চালু হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পরও তা অব্যাহত থাকে। ১৯৮৮ সালে সরকার স্থায়ীভাবে সম্পদ কর আদায় করতে অর্থ আইনের মাধ্যমে আয়কর অধ্যাদেশে ১৬এ ধারা যুক্ত করে। পরে নানামুখী চাপে ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে সেটি প্রত্যাহার করা হয়। পরবর্তী সময়ে ২০১০-১১ অর্থবছরে সরকার সম্পদ করের বিকল্প হিসেবে সারচার্জ আরোপ করে। শুরুতে দুই কোটি টাকার বেশি সম্পদের ওপরে সারচার্জ আরোপ করা হয়। পরবর্তী সময়ে তাতে ছাড় দিয়ে তিন কোটি টাকা করা হয়। বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় যখন বাড়তি কর দরকার, তখন ধনীদের এ দায়িত্ব নেওয়া উচিত। সে জন্য সারচার্জ যৌক্তিক হারে বাড়ানো যেতে পারে।
অর্থনীতিবিদরা ধনীদের ওপর কর বাড়ানোর এমন উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। এটি যদি বাস্তবায়ন হয়, তাহলে আয় বৈষম্য ও সম্পদ বৈষম্য কমাতে সহায়ক হবে বলে মন্তব্য করেছেন তারা। একই সঙ্গে রাজস্ব আদায় বাড়াতে সাহায্য করবে।
এ প্রসঙ্গে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, দেশে আয় ও সম্পদ বৈষম্য বাড়ছে। এ অবস্থায় ধনীদের কাছ থেকে বেশি কর আদায় করা হলে তা বৈষম্য কমিয়ে আনতে সহায়তা করবে। এ ছাড়া ব্যক্তিগত করদাতাদের সর্বোচ্চ করহার পর্যালোচনার (বাড়ানো) ওপরও জোর দেন তিনি।
মন্তব্য করুন