রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বড় অভিঘাত পড়েছে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে। সে দেশের বাজারে পণ্য ও সেবার মূল্য অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ওঠে কয়েক মাস আগে। অতিসম্প্রতি মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে এসেছে। এরপরও এপ্রিল শেষে ১৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ব্রিটিশ রিটেইলার কনসোর্টিয়ামের (বিআরসি) শঙ্কা, ২০২৩-এর গোটা বছরই অন্তত খাদ্যপণ্যে উচ্চ মূল্যস্ফীতির ধারা বজায় থাকতে পারে। এ পরিস্থিতিতেও যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বেশ সন্তোষজনক।

চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত গত ৯ মাসে যুক্তরাজ্যে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১৪ শতাংশ, যা জোটগত প্রধান বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) চেয়েও বেশি। ২৭ দেশের জোট ইইউতে এ সময় রপ্তানি বেড়েছে ১২ শতাংশেরও কিছু কম। এ সময় যুক্তরাজ্যে রপ্তানি হয় ৩৮৫ কোটি ডলারের পোশাক। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে রপ্তানি বেশি হয় প্রায় ১২ শতাংশ। গত ৯ মাসে দেশটিতে ৩৭৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের।

সন্তোষজনক রপ্তানির সুবাদে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে যুক্তরাজ্যে হিস্যা এখন ১০ দশমিক ৯১ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময় যা ছিল ১০ দশমিক ৭৩ শতাংশ। ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের প্রস্থান (ব্রেক্সিট) কার্যকরের পর যুক্তরাজ্যে রপ্তানি ধরে রাখা নিয়ে কিছুটা সংশয় তৈরি হয়। ২০২১ সালের প্রথম দিন থেকে ব্রেক্সিট কার্যকর হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের মধ্যকার এক বৈঠকে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে দু’দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়েও আলোচনা হয়। স্থানীয় সময় গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দু’দেশের মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্ক উন্নত করেছি।’ ঢাকা-লন্ডনের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যবিষয়ক একটি যৌথ ইশতেহার সই হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ব্রিটিশ কোম্পানিগুলোর আরও বিনিয়োগ চেয়েছেন। লন্ডনে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে রাজা তৃতীয় চার্লসের রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে যাোগ দিতে রাষ্ট্রীয় সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন লন্ডন রয়েছেন।

অর্থমূল্যে পোশাক বেশি রপ্তানির বিবেচনায় যুক্তরাজ্যের অবস্থান এখন তৃতীয়। আলোচ্য ৯ মাসে প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয় ৬২৬ কোটি ডলারের মতো। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি হয় জার্মানিতে ৫১৫ কোটি ডলারের পোশাক। তবে দেশ দুটিতে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে রপ্তানি কমেছে। যুক্তরাষ্ট্রে কমেছে ৫ শতাংশ আর জার্মানিতে কমেছে ৪ শতাংশের কিছু বেশি।

যুক্তরাজ্যে আগামীতে রপ্তানি আরও বাড়বে বলে আশা করছেন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান। সমকালকে তিনি বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বাড়তি তিন বছর যুক্তরাজ্যে অব্যাহতভাবে পোশাক রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে বিষয়টি আগেই জানানো হয়েছে। এ ছাড়া দেশটিতে পোশাক রপ্তানি আরও বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ আছে বিজিএমইএর। চাহিদাসম্পন্ন ম্যান মেইড ফাইবারে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার বাড়তি সুবিধা তো আছেই।

যুক্তরাজ্যের কয়েকটি ব্র্যান্ড ক্রেতার রপ্তানি আদেশ সরবরাহ করে থাকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লাহ অ্যাপারেল। প্রতিকূলতার মধ্যে যেখানে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানির মতো বড় বাজারে পোশাক রপ্তানি কমেছে, সেখানে যুক্তরাজ্যে পোশাক রপ্তানি বেড়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিকেএমইএ সভাপতি ফজলে শামীম এহসান সমকালকে বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি থাকলেও ডলারের বিপরীতে ব্রিটিশ মুদ্রার পাউন্ডের দর আবার বেড়েছে। ব্রিটিশ ব্র্যান্ড ক্রেতারা রপ্তানি আদেশ বাড়িয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।